কিবরিয়া হত্যা: হারিছ আরিফুল গউছকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ

সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলায় সম্পূরক অভিযোগপত্র গ্রহণ করে বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, আরিফুল হক চৌধুরী, জি কে গউছসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত।

হবিগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Dec 2014, 08:15 AM
Updated : 21 Dec 2014, 01:19 PM

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সিলেট অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুন নেছা পারুল এই ১১ জনের নাম যোগ করে রোববার হবিগঞ্জের আদালতে সংশোধিত সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেন। 

হবিগঞ্জের জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম রশিদ আহমেদ মিলন তা গ্রহণ করে নতুন আসামিদের গ্রেপ্তারের আদেশ দেন।

এই ১১ জন হলেন- খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পৌর  মেয়র গোলাম কিবরিয়া গউছ, হাফেজ মো. ইয়াহিয়া, মওলানা শেখ আবদুস সালাম, আবদুল জলিল, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান ও দেলোয়ার হোসেন রিপন।

তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আগামী ৮ জানুয়ারি পুলিশকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

বিচারকের আদেশের পরপরই আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মীরা সংঘর্ষে জড়ান। প্রায় আধা ঘণ্টা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষে দুই পক্ষের অন্তত ৭ জন আহত হন।

পরে বাড়তি পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে বলে সদর থানার ওসি নাজিমউদ্দিন জানান।

নতুন আসামিদের নিয়ে এ মামলায় আসামির সংখ্যা ৩৫ জনে দাঁড়াল বলে মামলার বাদী ও হবিগঞ্জ-২ আসনের সংসদ আব্দুল মজিদ খান জানান।

সম্পূরক অভিযোগপত্রে সন্তোষ জানিয়ে তিনি বলেন, “আজ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিবরিয়া হত্যার বিচার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি, এ সরকারের আমলেই এ হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে।”

হবিগঞ্জের সাবেক জেলা প্রশাসক এমদাদুল হকসহ কয়েক জনের নাম আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করলেও এবার অভিযোগপত্রের ওপর নারাজি দেবেন না বলে জানিয়েছেন কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া।

অন্যদিকে সম্পূরক অভিযোগপত্রে অসন্তোস জানিয়ে আসামিপক্ষের আইনজীবী সালেহ আহমেদ বলেন, “আমরা মনে করি যারা প্রকৃত আসামি তাদের অভিযোগপত্রে আনা হয়নি।  শুধুমাত্র রাজনৈকি উদ্দেশ্যে এবং সিলেটকে বিএনপি শূন্য করতে হারিছ চৌধুরী, সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও হবিগঞ্জ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গউছকে আসামি করা হয়েছে।”

শাহ এ এম এস কিবরিয়া

আসামিদের মধ্যে নতুন ১১ জন বাদে আট জন জামিনে এবং ১৬ জন বিভিন্ন মামলায় কারাগারে আটক আছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

তৃতীয় দফায় তদন্ত শেষে মেহেরুন্নেছা পারুল গত ১৩ নভেম্বর এই ৩৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দেন। কিন্তু কয়েকজন আসামির নাম-ঠিকানা ভুল থাকায় আদালত গত ৩ ডিসেম্বর তাকে নতুন করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিলের নির্দেশ দেয়।

এর আগে দুইবার দেয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানের নামও এসেছে।

বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদরের বৈদ্যের বাজারে ঈদ পরবর্তী এক জনসভা শেষে বের হওয়ার পথে গ্রেনেড হামলার শিকার হন সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া। ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

ওই হামলায় আরো নিহত হন কিবরিয়ার ভাতিজা শাহ মনজুরুল হুদা, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুর রহিম, আবুল হোসেন ও সিদ্দিক আলী। আহত হন শতাধিক নেতাকর্মী।

হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ খান ওই রাতেই হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দায়ের করেন।

প্রথমে সিআইডির এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান মামলাটি তদন্ত করে ১০ জনের বিরুদ্ধে ওই বছরের ২০ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এই অভিযোগপত্রে জিয়া স্মৃতি ও গবেষণা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও হবিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল কাইউম, ও ব্যাংক কর্মকর্তা আয়াত আলী, কাজল মিয়া, সাবেক জেলা ছাত্রদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক সেলিম আহমেদ, জিয়া স্মৃতি গবেষণা পরিষদ জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী, বিএনপি কর্মী তাজুল ইসলাম, জয়নাল আবেদীন জালাল, ইউনিয়ন বিএনপির নেতা জমির আলী, জয়নাল আবেদীন মোমিন ও মহিবুর রহমানকে আসামি করা হয়।

এরপর মামলার বাদী আবদুল মজিদ খান ২০০৬ সালের ৩ মে সিলেট দ্রুত বিচার আদালতে নারাজি আবেদন করলে আদালত তা খারিজ করে। এরপর ১৪ মে তিনি হাই কোর্টে আপিল করেন।

আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে হাই কোর্ট ‘কেন অধিকতর তদন্ত করা যাবে না’ মর্মে রুল জারি করে। এই রুলের বিরুদ্ধে ২০০৬ সালের ১৮ মে লিভ টু আপিল করে সরকার। আপিল বিভাগ সরকারের আপিল খারিজ করে।

এরপর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়, যার দায়িত্ব দেওয়া হয় সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলামকে।

তিনি ২০১১ সালের ২০ জুন আরও ১৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আগের আসামিদেরও এতে রাখা হয়।

এ অভিযোগপত্রে নতুন যোগ হয় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান, লস্করই তৈয়বার সদস্য আব্দুল মজিদ কাশ্মিরি, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আব্দুস সালাম পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, মহিউদ্দিন অভি, শাহেদুল আলম দিলু, সৈয়দ নাঈম আহমেদ আরিফ, ফজলূল আলম মিজান, মিজানুর রহমান মিঠু, মোহাম্মদ আব্দুল হাই, মোহাম্মদ আলী, মুফতি সফিকুর রহমান, বদরুল এনায়েত ওরফে মো. বদরুল, বদরুল আলম মিজানের নাম।

কিন্তু এরপর আবার ২০১১ সালের ২৮ জুন কিবরিয়ার স্ত্রী আসমা কিবরিয়া অভিযোগপত্রে হবিগঞ্জের বিচারিক আদালতে নারাজি আবেদন করেন।

২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি নারাজি আবেদন গ্রহণ করেন সিলেটের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক। এরপর  তৃতীয়বারের মতো অধিকতর তদন্তের দায়িত্ব পান সিআইডির এএসপি মেহেরুন নেছা।