দুঃসময় ভুলে না যেতে ডিএমপি কমিশনারের পরামর্শ

উৎসবমুখর পরিবেশে এই ডিসেম্বরে বড়দিন পালন করতে পারলেও গতবছরের দুঃসহ স্মৃতি ভুলে না যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2014, 05:43 PM
Updated : 20 Dec 2014, 06:09 PM

মাত্র একবছর আগে যে আতঙ্ক ছিল তা এবার মানুষের চোখে না দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন তিনি।

শনিবার রাতে মিরপুরে বড়দিনের আগে এক আনন্দ উৎসব অনুষ্ঠানে বক্তব্যে ঢাকা মহানগর পুলিশের এই শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, “গত বছর যা করার চেষ্টা হয়েছিল তা এখন অনেকের চোখে-মুখে দেখতে পাই না। এটি ভালো লক্ষণ। আমি মনে করি না এটি খারাপ লক্ষণ।

“কিন্তু আমাদের মনে হয় এগুলো মনের মণিকোঠায় গোপনে সঞ্চয় করে রাখতে হবে ভবিষ্যতের জন্য, যাতে করে ভবিষ্যতে কোনো সময় এ ধরনের অপশক্তি মাথাচড়া দিয়ে উঠতে না পারে।”

গত বছরের চাপিয়ে দেওয়া ‘অন্যায় যুদ্ধে অপশক্তি’কে যেভাবে পরাজিত করা হয়েছে তেমনি ‘দেশ বিরোধী অপশক্তি’কে ভবিষ্যতেও নিশ্চিহ্ন করার অঙ্গীকার করেন বেনজীর।

তিনি বলেন, “গত বছর এ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে অপশক্তি একটা ‘সাইলেন্ট সিভিল ওয়ার’ করার চেষ্টা করেছে। সাধারণ মানুষকে তারা পুড়িয়ে মেরেছে, হত্যা করেছে। লাখ লাখ গাছ তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি।”

গতবছর জাতীয় উন্নয়ন যেভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তাতে প্রাথমিক খসড়া হিসাব অনুযায়ী ৪৮ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন ঢাকার পুলিশ প্রধান।

“এ সম্পদ জনগণের সম্পদ, রাষ্ট্রের সম্পদ। এ সম্পদ নষ্ট করার অধিকার কোনো গোষ্ঠী বা মহলকে দেয়নি এ দেশের নাগরিকরা,” বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “দেশের মানুষ ঐতিহ্যগতভাবে শান্তিপ্রিয়। অনেক দুঃসময়ে এ দেশের মানুষ প্রমাণ করেছে নিজেদের সামাজিক ঐক্য, মেলবন্ধন ও পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা রয়েছে।

“কিন্তু দশম সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে চলে নৈরাজ্য- সহিংসতা।”

ওই সময় রাজধানীর বড়দিনের অনুষ্ঠানে এসে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের চোখে ‘আতঙ্ক’ দেখেছেন বলে দাবি করেন তিনি।

দেশের মানুষের উদারতার কথাও তুলে ধরেন সে সময়েও ডিএমপির শীর্ষ পদে থাকা বেনজীর।

তিনি বলেন, “এ মুহুর্তে স্মরণ করতে চাই-গত বছর ডিসেম্বরের কথা। তখন বাংলাদেশ কি ছিল! তখন ঢাকা শহরে কী করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমাদের জাতির অনেক অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে-এর অন্যতম হচ্ছে উদারতা।

“আমরা উদার জাতি। সেজন্য বোধ হয় আমাদের মধ্যে বিস্মৃতির প্রবণতা রয়েছে।”

অপতৎপরতাকারীদের নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া অঙ্গীকারের মধ্যে সেই দুঃসময়েও উৎসবমুখর পরিবেশে বড়দিন উদাযাপিত হয়েছে বলেও দাবি করেন পুলিশ কমিশনার।

নিজের স্বপ্নের কথাও তুলে ধরতে গিয়ে বেনজীর বলেন, “আমরা এমন সমাজ ব্যবস্থা কায়েম করতে চাই-যেখানে পুলিশ প্রহরায় ঈদের নামাজ পড়াতে হবে না। পুলিশ দিয়ে হিন্দু তার পূজা করবে না।

“পুলিশ প্রহরায় খ্রিস্টান সম্প্রদায় বড়দিনের উৎসব করবে না। সে সমাজ কায়েম করতে চাই-যেখানে নিরাপত্তাবোধ ও সংহতি থাকবে। ভালোবাসার শক্তি দিয়ে সব অপশক্তিকে পরাজিত করবো।”

অপশক্তিকে রুখতে সবার সহযোগিতা চান তিনি।

অনুষ্ঠানে বিশপ নিবারণ দাসের সভাপতিত্বে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, সমাজকল্যণ প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশ খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি প্রমোদ মানকিন, বাংলাদেশ ব্যাপটিস্ট চার্চের সভাপতি জয়ন্ত অধিকারী, বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক নির্মল চ্যাটার্জি, বাংলাদেশ খ্রিস্টান লীগের সভানিত্রী মঞ্জু সমাদ্দার বক্তব্য দেন।