পিলখানায় শেখ হাসিনা

পিলখানায় বিজিবি দিবসের অনুষ্ঠান উদ্বোধন করে এই বাহিনীর আধুনিকায়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে সীমান্ত রক্ষায় তাদের সজাগ থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2014, 04:10 AM
Updated : 20 Dec 2014, 09:36 AM

শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী পিলখানার বীর উত্তম আনোয়ার হোসেন প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং বিজিবির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদ তাকে স্বাগত জানান।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রীকে বিজিবির পক্ষ থেকে সশস্ত্র সালাম জানানো হয়। এসময় জাতীয় সংগীত বাজায় বিজিবির বাদক দল। এরপর তিনি খোলা গাড়িতে করে গার্ড পরিদর্শন করেন।

এই পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি রক্তাক্ত বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৩ জন নিহত হন। পিলখানা থেকে বিদ্রোহ ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের নানা প্রান্তের বিভিন্ন ইউনিটেও, যার অবসান ঘটে ২৭ ফেব্রুয়ারি।

বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর ওই বিদ্রোহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোড়ন তুলেছিল। বিদ্রোহের ঘটনায় বাহিনীর নিজস্ব আইনে বিচার হয়েছে। রায় হয়েছে প্রচলিত আদালতে পিলখানায় হত্যাকাণ্ডেরও।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে এই বাহিনীর শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন ২০১০’ প্রণয়নের কথা উল্লেখ করেন।

রক্তাক্ত ওই বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর নাম বিডিআরের থেকে পরিবর্তিত হয়ে বিজিবি হয়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও।

বিজিবিকে আধুনিক বাহিনী হিসাবে গড়ে তুলতে সরকার ব্যাপক সংস্কারমূলক ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম চালাচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। বিজিবিকে চারটি অঞ্চলে ভাগ করে ‘কমান্ড বিকেন্দ্রিকরণ’ করে এই বাহিনীকে আরও শক্তিশালী ও বেগবান করার কথাও বলেন তিনি।

বিজিবির গোয়েন্দা সংস্থাকে শক্তিশালী করতে ‘বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো’ স্থাপনসহ অন্য পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বিজিবিকে যুগোপযোগী ও আধুনিক করতে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”

বিজিবি সদস্যদের রেশন ও বাসস্থান সুবিধা বাড়ানো, পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসা সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার প্রতিম্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, “আপনাদের জীবন যাপনের সুবিধা বাড়াতে আমরা সবকিছু করব।”

সীমান্তে দায়িত্ব পালনে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজিবির কার্যক্রমের প্রশংসা করে সেই ধারা অব্যাহত রাখতে বলেছেন শেখ হাসিনা।  

তিনি আশা প্রকাশ করেন, চোরাচালান, মাদক পাচার এবং নারী ও শিশু পাচারসহ সীমান্ত অপরাধ আরও কমবে।

সীমান্তে কোনও কারণে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ বাংলাদেশের নাগরিকদের আটক করলে যোগাযোগ করে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে বিজিবির পদক্ষেপের কথাও বলে প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সীমান্তে নিহতের সংখ্যা কমে এসেছে। বিভিন্ন ঘটনা যা ঘটত, এখন আর তা ঘটে না।” 

বীরত্ব ও বিশেষ কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রধানমন্ত্রী বিজিবির ১০ জন সদস্যকে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ পদক’, ২০ জনকে ‘প্রেসিডেন্ট বর্ডার গার্ড পদক’ এবং ১০ জনকে ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (সেবা)’ ও ২০ জনকে ‘প্রেসিডেন্ট বর্ডার গার্ড (সেবা)’ পদক পরিয়ে দেন।

মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন সীমান্ত রক্ষী এই বাহিনীর (ইপিআর) সাহসী ও গৌরবময় ভূমিকার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, এই বাহিনী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।

বিজিবি কর্মকর্তারা জানান, তৎকালীন ইপিআরের ১২ হাজার বাঙালী সদস্য মুক্তিযুদ্ধ অংশ নেন। এর মধ্যে যুদ্ধে ৮১৭জন শহীদ হন। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য এই বাহিনীর দুজন বীরশ্রেষ্ঠ, আটজন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীক খেতাব পেয়েছেন। 

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআরের বেতার যন্ত্রের মাধ্যমে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “এই সেই পিলখানা। এখান থেকে স্বাধীনতার বার্তা সারা বাংলাদেশে পৌঁছে যায়।”

বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করায় ইপিআরের সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করার বিষয়টি তার বক্তব্যে আসে।

“তারা থেমে থাকেন নাই। এমনকি পাকিস্তানি বাহিনী যখন পিলখানা আত্রমণ করে, তখনও তারা ওয়ারলেস ও রেডিওর মাধম্যে বার্তা প্রেরণ করতে থাকে।”

স্বাধীনতার পর ২১৯ বছরের ঐতিহ্যের এই বাহিনীর নাম ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) বদলে বাংলাদেশ রাইফেলস (বিডিআর)। বিদ্রোহের পর নাম আবার দলে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হয়।

২০০৯ সালের বিদ্রোহ ও পিলখানায় হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘কালো অধ্যায়’ অবিহিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “বিডিআর বিদ্রোহের সকল চক্রান্তকারীর অপতৎপরতা আমরা ধৈর্য় ও সতর্কতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছিলাম। যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিচার আমরা সম্পন্ন করেছি।”

সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিজিবির সহযোগিতাও চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

দশম জাতীয় নির্বাচনের আগে সহিংসতা মোকাবেলা করতে গিয়ে বিজিবির একজন নায়েব সুবেদার এবং দুজন সিপাহী মারা যাওয়ার কথাও বলেন তিনি।

“গতবছর জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় আপনারা প্রশংসনীয় ও সাহসী ভূমিকা পালন করেছিলেন।”

বিজিবি দিবসের অনুষ্ঠানে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদসহ মন্ত্রিসভার সদস্য ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

পরে বীরোত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দরবারে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখেন। সেখানেও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বিজিবির মহপারিচালক ছাড়াও বিজিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।