৩৯ চিকিৎসকের ৩২ জনই নেই

চিকিৎসক সংকট, নোংরা পরিবেশ আর অব্যবস্থাপনায় ব্যাহত হচ্ছে ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা।

আহাদ চৌধুরী তুহিন ভোলা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Dec 2014, 05:33 PM
Updated : 19 Dec 2014, 05:36 PM

সেবা না পাওয়ায় রোগীদের নিয়ে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলায় ছুটছেন তাদের স্বজনরা।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ৫০ শয্যার ভোলা সদর হাসপাতালকে ২০০০ সালে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও গত ১৪ বছরে বাড়তি জনবল নিয়োগ তো দূরের কথা উল্টো ৩৯ চিকিৎসকের পদের মধ্যে ৩২টিই খালি হয়ে গেছে।

এ অবস্থার মধ্যেই গত বছরের ৯ মে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এবং বর্তমান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন।

হাসপাতালে সিনিয়র ও জুনিয়র কনসালটেন্টের পদ আছে ২১টি, যেখানে মাত্র তিন জন বর্তমানে দায়িত্ব পালন করছেন। সহকারী সার্জন ও মেডিকেল অফিসারের ১৭টি পদের মধ্যে বর্তমানে আছেন মাত্র চারজন। হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসকের পদটিও খালি।

১৭ লাখ বাসিন্দার দ্বীপ জেলা ভোলার প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র সদর হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৬০০ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এছাড়া ভর্তি রোগী থাকেন দেড়শ থেকে দুইশ’র বেশি।

চিকিৎসক যারা আছেন তারা বহির্বিভাগে রোগীদের সেবা দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন।বাধ্য হয়ে অধিকাংশ রোগী পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ অন্যান্য হাসপাতালে।

গত ১ ডিসেম্বর সকালে শহরের কালিনাথ বাজার এলাকার কালীপদ রায় (৫৫) বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে আসলেও চিকিৎসক না থাকায় বেলা ১১টার দিকে তাকে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলে পাঠানো হয়।

আগের দিন পাঙ্গাশিয়া এলাকার শহিদুল (১৮) শারীরিক দুর্বলতা নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। রোগ নির্ণয় করতে না পেরে দুই দিন পর তাকেও বরিশালে পাঠানো হয়।

গত ২৯ নভেম্বর ভোলার গ্যাস ফিল্ডের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মেশিন অপারেটর স্বপন খান (৪০) বৈদ্যুতিক বাল্ব বিস্ফোরণে শরীরে কাচের টুকরো নিয়ে হাসপাতালে আসলেও চিকিৎসা না পেয়ে ওই দিনই ঢাকায় চলে যান।

স্থানীয় ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন জানান, মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত তার ভগ্নিপতিকে হাসপাতালে ভর্তির পাঁচদিন পর বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করা হয়।

তাছাড়া সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক না থাকায় রোগীদের বাইরের ক্লিনিক থেকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করাতে হয়।

হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকটির কার্যক্রমও দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ। হাসপাতালের ভিতরের পরিবেশ আগের চেয়ে ভাল হলেও টয়লেটগুলো এখনো নোংরা। হাসপাতাল চত্বরে থাকা ছোট পরিসরের বাগানে শিশু রোগীদের মলত্যাগ করতেও দেখা গেছে।

এ পরিস্থিতি নিয়ে হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট সামি আহমেদ বলেন, “সবচেয়ে সমস্যা হচ্ছে এনেসথেসিস্ট না থাকায় কোনো ধরনের অস্ত্রোপচার করা যাচ্ছে না। মেডিসিন কনসালটেন্ট ও কার্ডিওলজিস্ট না থাকায় চিকিৎসা নিতে আসা অনেককেই সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।”

চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে ভোলার সিভিল সার্জন ফরিদ আহমেদ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ভোলা সদর হাসপাতালের কনসালটেন্ট ও মেডিকেল অফিসারের শূন্য পদ পূরণের আশ্বাস দিয়েও তা না হওয়ায় জনগণকে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেওয়া যাচ্ছে না।

ভোলার জেলা প্রশাসক মো. সেলিম রেজা বলেন, “আমি বিষয়টি জানি। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সচিবের সঙ্গে একাধিকবার কথাও হয়েছে। সচিব আশ্বাস দিয়েছেন শূন্য পদে চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়ার।”