ট্যাঙ্কার ডুবে সাড়ে তিন লাখ লিটারের বেশি ফার্নেস অয়েল সুন্দরবনের নদী ও খালে ছড়িয়ে পড়ার ১০ দিন পর শুক্রবার ওই এলাকা পরিদর্শন করে মন্ত্রী একথা বলেছেন।
জ্বালানি তেল ছড়ানোর পর যে পরিমাণ ক্ষতির আশঙ্কা করা হয়েছিল পরিস্থিতি ততোটা খারাপের দিকে যায়নি বলে মনে করছেন পরিবেশমন্ত্রী।
তিনি বলেন, “পরিস্থিতি যতোটা খারাপ মনে করেছিলাম পরিস্থিতি আসলে ততোটা খারাপ না। এখনো কোনো জলজ বা বণ্যপ্রাণী মারা যায়নি। সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু করেছে।”
ঘটনার সময় বিদেশে থাকা পরিবেশমন্ত্রী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন, “ছড়িয়ে পড়া ফার্নেস অয়েলে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও জলজ প্রাণীর অবশ্যই ক্ষতি হয়েছে।”
তিনি বলেন, “নদী-খালে তেল ছড়িয়ে পড়ায় শেলা নদীর দুই পাড়ের বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছে এখনো তেল লেগে রয়েছে। যেসব গাছের শ্বাসমূলে তেল ঢুকে রয়েছে সেসব গাছ আস্তে আস্তে শুকিয়ে মরে যাবে। তবে কিছু দিন গেলে পরে ওই সব স্থানে আবার নতুন করে গাছ জন্মাবে।”
ফার্নেস অয়েলে ভবিষ্যতে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও জলজ প্রাণীর ওপর প্রভাব পড়বে কি না এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, “সরকার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সাহায্য নিয়ে খুব শিগগির গবেষণার কাজ শুরু করবে। ওই গবেষণা ছাড়া এখনই কিছু বলা যাবে না।
“ওই সব সংস্থার গবেষণায় সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য ও জলজ প্রাণীর ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে পরবর্তীতে যা করণীয় সরকার তা করবে।”
সুন্দরবনের নদী-খালে ছড়িয়ে পড়া তেল অপসারণে যারা সহযোগিতা করছেন তাদের ধন্যবাদ জানান বন ও পরিবেশ মন্ত্রী। স্থানীয় গ্রামবাসীদের সঙ্গে নিয়ে তেল অপসারণের কাজ আরো এগিয়ে নিতে বনবিভাগকে নির্দেশ দেন তিনি।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সীপ্লেনে করে সুন্দরবন পরিদর্শনে আসেন মন্ত্রী। মংলা বন্দরের কাছে মংলা নদীর নারকেলতলা এলাকায় নেমে স্পিডবোটে করে ট্যাঙ্কার ডুবির ঘটনাস্থল শেলা নদীর জয়মনি, বাদামতলাসহ সুন্দরবনের অন্তত ১৫ কিলোমিটার এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। বিকেল সাড়ে ৩টায় সীপ্লেনে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন মন্ত্রী।
বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার রাকিবুর রহমান, বনবিভাগের প্রধান বনসংরক্ষক মো. ইউনুস আলী, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রাইসুল আলম মণ্ডল, খুলনা বিভাগীয় কমিশনার আব্দুস সামাদ, পরিবেশ অধিদপ্তরের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ড. মল্লিক আনোয়ার হোসেন, সুন্দরবন খুলনা অঞ্চলের বনসংরক্ষক কার্ত্তিক চন্দ্র সরকারসহ বন বিভাগের কর্মকর্তারা এসময় তার সঙ্গে ছিলেন।
গত ৯ ডিসম্বের ভোরে সুন্দরবনের শেলা নদীতে একটি মালবাহী কার্গোর ধাক্কায় তিন লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার ফার্নেস অয়েলবাহী একটি ট্যাঙ্কার ডুবে যায়। ধাক্কায় ট্যাঙ্কারের খোল ফেটে তেল নিঃসরিত হয়ে তা সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
ঘটনার চার দিনের মাথায় স্থানীয়দের দিয়ে সুন্দরবনের নদী-খাল থেকে তেল অপসারণ শুরু করে প্রশাসন। এ পর্যন্ত ৬৬ হাজার ৩০০ লিটার তেল সংগ্রহ করা হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।