তাপস খুন, ‘বহিষ্কৃতদের’ নেতৃত্বে পরিকল্পিত হত্যা: সিএফসি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দু’পক্ষের ‘সংঘর্ষ’ নয় বরং পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ‘বহিষ্কৃতদের’ নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে তাপস সরকারকে খুন করা হয়েছে বলে দাবি করেছে ছাত্রলীগের একাংশ।

চট্টগ্রাম ব্যুরো বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2014, 07:03 PM
Updated : 18 Dec 2014, 07:03 PM

বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানায় চবি ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক সংগঠন চুজ ফ্রেন্ডস কেয়ারকুলি'র (সিএফসি) নেতারা।

শুরু থেকেই নিহত তাপস সরকারকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করে আসছে সিএফসি।

সংবাদ সম্মেলনে সিএফসি’র নেতাকর্মীরা উপস্থিত থাকলেও অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয় চবি ছাত্রলীগের ব্যানারে।

একই ব্যানারে বুধবার আরেক বগিভিত্তিক গ্রুপ ভার্সিটি এক্সপ্রেস (ভিএক্স) সংবাদ সম্মেলন করে এ ঘটনায় গ্রেপ্তারদের মুক্তির দাবিসহ ছয় দফা দাবিতে তিন দিনের আল্টিমেটাম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধের হুমকি দেয়। 

এর পরদিনই সংবাদ সম্মেলন করে হত্যাকাণ্ডের জন্য ‘ছাত্রলীগের বহিষ্কৃতদের’ দায়ী করে চার দফা দাবি জানায় সিএফসি।

চবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি ও সিএফসি গ্রুপের অন্যতম নেতা অমিত কুমার বসু বলেন, "সেদিন কোনো সংঘর্ষ হয়নি। ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত সন্ত্রাসীরা একতরফা হামলা করে তাপসকে খুন করেছে।

“তাপসের লাশ নিয়ে রাজনীতি করার ইচ্ছে আমাদের নেই। আমরা শুধু হত্যাকাণ্ডের যথার্থ বিচার চাই। যারা বহিষ্কৃত তাদের সাথে দ্বন্দ্বের বিষয় অবান্তর।”

বুধবার ভিএক্স’র সংবাদ সম্মেলনে তাপসের শরীরে নাইন এম এম পিস্তলের দুটি গুলি পাওয়া গেছে বলে দাবি করে প্রশ্ন তোলা হয়, 'শাহজালাল হল থেকে গুলি ছোঁড়া হলে তা একশ মিটার দূরে শাহ আমানত হলে থাকা তাপসের শরীরে কি করে লাগল?'

এর জবাবে বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে অমিত কুমার বসু বলেন, "তাপসের শরীরে দুটি গুলি লাগার দাবি সর্বৈব মিথ্যা। আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) ফরেনসিক রিপোর্ট দেখেছি। তাতে মাত্র একটি গুলির উল্লেখ আছে। বহিষ্কৃত আশার নেতৃত্বেই গুলি চালানো হয়।"

তাপস হত্যাকাণ্ডে ভিএক্স গ্রুপের নেতা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির উপ-সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান আশার সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া প্রতিবেদন ও অভিযোগ সত্য নয় বলে বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে ভিএক্স নেতারা দাবি করেন।

এর পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের জন্য সিএফসির নেতা রাকিব হোসেনকে দায়ী করে বগিভিত্তিক সংগঠন ভিএক্স। 

অমিত কুমার বলেন, "হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে আমাদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ করা হচ্ছে। চবি’তে অবকাঠামোগত উন্নয়নের যে কাজগুলো হচ্ছে তা নিয়ন্ত্রণ করে মাত্র চারজন। তারা হলেন- শাহজাহান, মঞ্জুরুল আলম, এরশাদ ও লিটন (চারজনই চবি ছাত্রলীগের সাবেক নেতা)। এরাই ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃতদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিচ্ছে। 

“হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে একটি মাফিয়া চক্র ষড়যন্ত্র করছে। তাপস খুন হওয়ার পর শিবির নিয়ন্ত্রিত হলগুলোতে মিষ্টি বিতরণ প্রমাণ করে হত্যাকারীরা প্রতিক্রিয়াশীল চক্রেরই অংশ।"

অমিত কুমার বলেন, "শুধু তাই নয়, ঘটনার দিন শাহজালাল হলে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ আগ্নেয়াস্ত্র ও জিহাদী বইপত্র উদ্ধার করে। এটা প্রমাণ করে কারা ক্যাম্পাসে প্রতিক্রিয়াশীলতার রাজত্ব কায়েম করতে চায়।" 

সংবাদ সম্মেলনে যে চার দফা দাবি জানানো হয় তা হল- তাপসের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করা, হত্যায় জড়িতদের সনদ বাতিল করা, হত্যাকারীদের মদদদাতা হিসেবে প্রক্টরের দ্রুত পদত্যাগ ও তাপসের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেয়া।

সংবাদ সম্মেলনে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমকে নিজেদের নেতা দাবি করেন অমিত কুমার।

তিনি বলেন, "বহিষ্কৃত সন্ত্রাসীরা আমাদের সাথে নাসির হায়দার বাবুলের সখ্যের কথা প্রচার করছে। তিনি চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। সেই হিসেবে আমাদের সাথে শুভাকাঙ্খী সুলভ সম্পর্ক আছে।"

গত রোববার বুদ্ধিজীবী দিবসে চবি ক্যাম্পাসের বুদ্ধিজীবী চত্বরে একসঙ্গে ফুল দিয়ে ফিরে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় ছাত্রলীগের ভিএক্স ও সিএফসি গ্রুপ।

এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সংস্কৃত বিভাগের শিক্ষার্থী তাপস সরকারকে শুরু থেকে নিজেদের কর্মী দাবি করছে সিএফসি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চবি ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন মামুন, জ্যেষ্ঠ সহ-সম্পাদক ওমর ফারুক, সহ-সম্পাদক রেজাউল হক রুবেল, উপ-আইন সম্পাদক কিশোর দাশ।