এত টাকা বাংলাদেশে রোজগার করা যায় না: মুসা

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে, তার পুরোটাই বিদেশে উপার্জনের দাবি করেছেন আলোচিত ব্যবসায়ী মুসা বিন শমসের। 

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2014, 10:20 AM
Updated : 18 Dec 2014, 02:23 PM

বৃহস্পতিবার দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “আমার বিষয়ে যা বলা হয়, আমি সাত বিলিয়ন ডলার বা ৫১ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছি। কেউ কোনো দিন এত টাকা এদেশে আয় করতে পারেনি, পারবেও না। আমি এই টাকা বিদেশে উপার্জন করেছি।”

সাত গাড়ি দেহরক্ষী নিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সেগুনবাগিচায় দুদক কার্যালয়ে আসেন মুসা, জাঁকজমকপূর্ণ চালচলনের কারণে বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে যাকে ‘বাংলাদেশের প্রিন্স’ বলা হয়।

অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদক কার্যালয়ে মুসাকে প্রায় তিন ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক মীর জয়নুল আবেদীন শিবলী। তিনিই বিষয়টি অনুসন্ধানের দায়িত্বে রয়েছেন।

আলোচিত এই ব্যবসায়ীকে তলব করে গত ৪ ডিসেম্বর গুলশানের বাসা ও বনানীর ব্যবসায়িক কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিল দুদক।

জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বেলা দেড়টার দিকে বেরিয়ে মুসা সাংবাদিকদের বলেন, “দুদক আমাকে ডেকেছে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আন্তরিক বিধায় আমি এসেছি।”

অভিযোগের তদন্ত প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “সব গল্পেরই একটি ইতিহাস থাকে, ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সত্য বেরিয়ে আসে।”

বাণিজ্য সাময়িকী বিজনেস এশিয়ার সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে গত ৩ নভেম্বর কমিশনের নিয়মিত বৈঠকে মুসা বিন শমসেরের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত হয়। সুইস ব্যাংকে এই ব্যবসায়ীর সাত বিলিয়ন ডলার রয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

অর্থ পাচারের বিষয়টি অস্বীকার করলেও সুইস ব্যাংকে টাকা থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেননি আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের বেয়াই মুসা বিন শমসের।

তিনি বলেন, “সুইস ব্যাংকে আটকে থাকা ওই টাকা উদ্ধার করা গেলে পদ্মা সেতু, দুঃস্থ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষকসহ সামাজিক গঠনমূলক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখব। সুখি-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার চেষ্টা করব।”

মুসার বড় ছেলে ববি হাজ্জাজ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিশেষ উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন।

১৯৫০ সালের ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশের ফরিদপুরে জন্ম নেয়া মুসা ড্যাটকো গ্রুপের মাধ্যমে জনশক্তি রপ্তানির ব্যবসা শুরু করেন। তবে তার পরিচিতি তুলে ধরতে গিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলো অস্ত্র ব্যবসার কথাই আগে আনে।

১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যে নির্বাচনে লেবার পার্টির প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী টনি ব্লেয়ারের নির্বাচনী প্রচারের জন্য ৫ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে আলোচনায় আসেন বাংলাদেশের এই ব্যবসায়ী।

এর আগে একটি দৈনিকে সুইস ব্যাংকে মুসা বিন শমসেরের ৫১ হাজার কোটি টাকা থাকার খবর ছাপা হওয়ার পর ২০১১ সালের এপ্রিলে একবার তার সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। কিন্তু পরে সেই প্রক্রিয়া আর এগোয়নি।