ফোরকান মল্লিকের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচ ঘটনায় পটুয়াখালীর ফোরকান মল্লিকের বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Dec 2014, 09:45 AM
Updated : 18 Dec 2014, 07:27 PM

একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে তখনকার এই মুসলিম লীগ কর্মীর বিরুদ্ধে।

বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ বৃহস্পতিবার ফোরকান মল্লিকের উপস্থিতিতে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্য শুরুর দিন ঠিক করে দেন।

আগামী ১৯ জানুয়ারি প্রসিকিউশনের প্রারম্ভিবক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

প্রসিকিউশনের পক্ষে মোখলেছুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নি এবং আসামিপক্ষে আব্দুস সালাম আদেশের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

গত ২ ডিসেম্বর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল-২। ৯ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের বিষয়ে উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদেশের জন্য বৃহস্পতিবার দিন রাখা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আটজনকে হত্যা ও গণহত্যা, ৪ জনকে ধর্ষণ, ৩ জনকে ধর্মান্তরে বাধ্য করা, ১৩টি পরিবারকে দেশান্তরে বাধ্য করা, ৬৪টি বসতবাড়ি ও দোকানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে পটুয়াখালীর ফোরকানের বিরুদ্ধে।

একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, র্ধষণ ও অগ্নিসংযোগের দায়ে ২০০৯ সালে ২১ জুলাই ফোরকানের বিরুদ্ধে মির্জাগঞ্জ থানায় আবদুল হামিদ নামে এক ব্যক্তি মামলা করেন।

এরপর এবছরের ২৫ জুন ফোরকানকে বরিশালের রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার করে পটুয়াখালী জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা।

তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত করেন প্রসিকিউশনের তদন্ত র্কমর্কতা সত্যরঞ্জণ রায়।

গত ৩ জুলাই মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার গ্রেপ্তার দেখিয়ে ট্রাইব্যুনাল ফোরকান মল্লিককে করাগারে পাঠায়।

ফোরকানের ৫ ‘যুদ্ধাপরাধ’

অভিযোগ ১: ১৯৭১ সালে বাংলা আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়ে (২৭ জুন থেকে ৩ জুলাইয়ের মধ্যে) কোনো একদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী রাজাকার সদস্যরা একদল পাকিস্তানি সেনাকে পথ দেখিয়ে গানবোটে করে মির্জাগঞ্জ থানাধীন কাকড়াবুনিয়া গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে হাওলাদার বাড়ির মো. কাঞ্চন আলী হাওলাদার, হাজী আবুল হাশেম হাওলাদারসহ মোট সাতজনকে আটক, নির্যাতন এবং বাড়িঘর লুটপাট করে তারা। তাদের কাছ থেকে জোর করে অর্থ আদায় করে একমাস আটকে রেখে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।

অভিযোগ ২: ১৯৭১ সালের আষাঢ় মাসের শেষদিকে (২ জুলাই থেকে ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে) একদিন ফোরকান মল্লিক ও তার রাজাকার সঙ্গীরা একদল পাকিস্তানি সেনাকে পথ দেখিয়ে গানবোট ও স্পিডবোটে করে মির্জাগঞ্জ থানাধীন দেউলী গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হায়দারসহ মোট ছয়জনের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে তারা।

অভিযোগ ৩: একাত্তরের ১২ অগাস্ট থেকে ৩১ অগাস্টের মধ্যে ফোরকান মল্লিক ও রাজাকার সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদবাহক কাকড়াবুনিয়া গ্রামের হাফিজ উদ্দিন খলিফা, মির্জাগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল কাদের জমাদ্দার, সুবিদখালী বাজারের ডাক্তার দেবেন্দ্রনাথ সরকার ও তার স্ত্রী বিভা রাণীকে আটক করে তারা। ওই গ্রামে তারা হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, ধর্মান্তরিতকরণ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটায়।

অভিযোগ ৪: ভাদ্র মাসের ৫ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত (২২ থেকে ২৫ অগাস্ট) ফোরকান মল্লিক ও তার রাজাকার সহযোগীরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে নিয়ে কাকড়াবুনিয়া বাজারে যায় এবং হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটায়।

অভিযোগ ৫: ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি (২৯ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর) সময়ে একদিন ভোরে ফোরকান মল্লিক ও রাজাকার সদস্যরা মির্জাগঞ্জ থানাধীন দক্ষিণ কলাগাছিয়া গ্রামের যায় এবং মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল হোসেন মৃধার বাড়িতে লুটপাট ও নির্যাতন চালায়।