অনুদান বরাদ্দের ক্ষমতা হারালেন মেয়র লুৎফর

লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের বিতর্কিত মেয়র লুৎফুর রহমানের ক্ষমতা খর্ব করে কাউন্সিলের অনুদানের অর্থ বরাদ্দ ও রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নিচ্ছে সরকার থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত একটি কমিটি।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2014, 04:21 PM
Updated : 15 Jan 2015, 04:50 PM

এজন্য যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এরিক পিকেলস নিয়োগকৃত দুই কমিশনার মেয়র লুৎফুর ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বুধবার কাউন্সিলের প্রধান কার্যালয়ে যান বলে লন্ডন ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

লন্ডনের সাবেক ফায়ার কমিশনার ও ব্রিটিশ সরকারের পরামর্শক স্যার কেন নাইট নেতৃত্বাধীন এই কমিটির অন্য সদস্য ম্যাক্স কলার কাউন্সিলের সাবেক প্রধান নির্বাহী এবং ইংল্যান্ডের সীমান্ত বিষয়ক স্থানীয় সরকার কমিশনের চেয়ারম্যান।

পার্লামেন্টে একটি লিখিত বিবৃতিতে পিকেলস বলেন, সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে এই কাউন্সিল ব্যর্থ হচ্ছে। এরপরেও মেয়রের প্রশাসন থেকে বারবার ব্যর্থতার কথা অস্বীকার করার বিষয়টি হতাশাজনক।

স্থানীয় সরকারে দুর্নীতি ঠেকাতে অবশ্যই ব্যবস্থা থাকতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এটা শুধু টাকার জন্য নয়। করদাতাদের অর্থের অপব্যবহার এবং স্বজনপ্রীতির চর্চা, যা দলীয় রাজনীতির বিবেচনায় বাণিজ্য সুবিধা ও মূল্য (সম্পদের দাম) নির্ধারণে বিভাজনের সৃষ্টি করে। 

“এ ধরনের আচরণ টাওয়ার হ্যামলেটস এবং আমাদের রাজধানীতে সংহতি ও সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করছে।”

স্যার কেনের কমিটি অবিলম্বে কাউন্সিলের অনুদান বরাদ্দ এবং কোনো সম্পদ বিক্রি বা হস্তান্তরের অনুমোদন দেওয়ার দায়িত্ব ভার গ্রহণ করবে।

গত মাসে প্রকাশিত প্রাইস ওয়াটারহাউজ কুপারসের এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে মেয়র লুৎফুরের বিরুদ্ধে বিপুল অর্থ অপব্যবহারের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হয়।

অনিয়মের মাধ্যমে নিজের সমর্থকদের সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি নিজের নির্বাচনী প্রচারে লুৎফুর কাউন্সিলের অর্থ ব্যয় করেছেন বলে তাতে বলা হয়।

লুৎফুর ‘অযোগ্য’ প্রতিষ্ঠানকে চার লাখ পাউন্ডের বেশি অনুদানের অর্থ বরাদ্দ দিয়েছেন বলে প্রমাণ মেলার কথাও জানায় নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানটি, যে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উগ্রবাদী সংগঠনও রয়েছে বলে অভিযোগ।

ওই প্রতিবেদন প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকারমন্ত্রী  পিকেলস টাওয়ার হ্যামলেটসকে ‘পচে যাওয়া’ বরো কাউন্সিল বলে আখ্যায়িত করেন।

অন্যদিকে কোনো অনিয়ম করার কথা অস্বীকার করেন লুৎফুর।  নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানটি কোনও জালিয়াতির প্রমাণ পায়নি বলে টাওয়ার হ্যামলেট বরো কাউন্সিল থেকে বলা হয়।

ফাইল ছবি

স্যার কেন বলেছেন, “ট্যাওয়ার হ্যামলেট পরিচালনায় আস্থা ফিরিয়ে আনতে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। স্থানীয়দের এমন একটি কাউন্সিল প্রাপ্য যেখানে শুধু স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না, মানসিক দিক থেকেও সব বাসিন্দাকে উপকৃত করবে।”

টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিল কর্তৃপক্ষ কমিশনারদের সঙ্গে কাজ করবে বলে কাউন্সিলের এক মুখপাত্র জানিয়েছেন।

২০১০ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটসে নির্বাহী মেয়র পদে নির্বাচিত হন লুৎফুর রহমান, যার বিরুদ্ধে ‘উগ্রপন্থী’ বিভিন্ন গোষ্ঠীকে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ আগে থেকে রয়েছে।

গত মে মাসে নির্বাচনে লুৎফুর পুনর্নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। বিবিসির প্যানোরমা অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন সাংবাদিকের অনুসন্ধানে অনিয়মের বিষয়টি উঠে এলে গত এপ্রিল মাসে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয় যুক্তরাজ্যের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

এরপর দেশের খ্যাতনামা হিসাব নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান প্রাইস ওয়াটারহাউজ কুপারসকে টাওয়ার হ্যামলেটসের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় নিরীক্ষা চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়।