‘ড্রোন’ বানাচ্ছে আনসারুল্লাহ!

উগ্রপন্থী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের দুই সদস্যকে আটক করার পর তাদের কাছে ড্রোন বা কোয়াড হেলিকপ্টারের মতো রিমোট কন্ট্রোল চালিত ‘ফ্লাইং মেশিন’ তৈরির সরঞ্জাম পাওয়ার কথা জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2014, 06:05 AM
Updated : 17 Dec 2014, 11:19 AM

গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ ছানোয়ার হোসেন জানান, মঙ্গলবার রাতে ঢাকার যাত্রাবাড়ি এলাকার শহীদ ফারুক হোসেন এলাকার একটি বাড়ি থেকে তানজিল হোসেন বাবু (২৬), মো. গোলাম মওলা মোহন (২৫) নামের ওই দুইজনকে আটক করা হয়।

তারা দুজনেই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য বলে পুলিশের দাবি।

পরে মহানগর পুলিশ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ড্রোন কিংবা কোয়াড হেলিকপ্টার তৈরি করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ছবি তুলে সেসব স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করছিল এই আনসারুল্লাহ সদস্যরা।

মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদে তারা বলেছে, ২৫/৩০ তলা উঁচু ভবনের ওপর দিয়ে উড়ে নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে পারে- এমন কোয়াড হেলিকপ্টার বা ড্রোন তৈরির চেষ্টা করছিল তারা। এসব যন্ত্র তৈরির মতো ইলেকট্রনিক ডিভাইসও আমরা তাদের কাছে পেয়েছি।”

আনসারউল্লাহ বাংলাটিমের ‘গুরু’ মাওলানা জসীম উদ্দিন রাহমানীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে মোহন ও বাবু ‘কথিত’ জিহাদি কার্যক্রমে শামিল হয়েছিল বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, “তারা কোন কোন স্থাপনায় হামলা করতে চেয়েছিল, তাদের সঙ্গে আর কারা জড়িত তা জানতে তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”

যুক্তরাষ্ট্রের কথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে গত কয়েক বছর ধরে মনুষ্যবিহীন এই ক্ষুদে উড়োজাহাজ ব্যবহারের ফলে ‘ড্রোন’ নামটি এখন বিশ্বব্যাপী পরিচিত।

এসব যানে সংবেদনশীল ক্যামেরা থাকে, যার মাধ্যমে যুদ্ধক্ষেত্রে নিজেদের অবস্থানের জানান না দিয়েই শত্রুর ওপর নজরদারি করা যায়। আফগানিস্তানের যুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কাজেও যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন ব্যবহার করেছে।

গোয়েন্দাগিরি ছাড়াও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, উদ্ধার অভিযানসহ বিভিন্ন কাজে এখন ড্রোন ব্যবহার করা হয়।  

মনুষ্যবিহীন বিমান নিয়ে বিশ্বব্যাপী গবেষণার প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উৎসাহী তরুণরা ক্যামেরা বহনে সক্ষম ছোট আকৃতির দূর নিয়ন্ত্রিত বিমান তৈরি করেছে।   

তবে বাংলাদেশের কোনো জঙ্গি বা উগ্রপন্থি সংগঠনের হাতে এ ধরনের প্রযুক্তি থাকার কথা এর আগে শোনা যায়নি।

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের নাম প্রথম আলোচনায় আসে গত বছর শেষ দিকে। অগাস্টে বরগুনা থেকে এ সংগঠনের প্রধান মুফতি জসীম উদ্দিন রাহমানীসহ ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ঢাকার মোহাম্মদপুরে জসীমের বাসা ও অফিসে অভিযান চালিয়ে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, সিডিসহ উসকানিমূলক বই উদ্ধার করা হয়।

গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা সে সময় বলেছিলেন, ‘জিহাদের’ মাধ্যমে সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম’ থানা থেকে অস্ত্র লুট ও বিভিন্ন স্থাপনায় হামলার পরিকল্পনা করেছিল।

জসীমসহ এ সংগঠনের ১০ সদস্যের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের একটি মামলায় গত ১৬ সেপ্টেম্বর অভিযোগপত্রও দিয়েছে পুলিশ।