জলের তেলে বিপদে জেলে

সুন্দরবনে শেলা নদীতে তেল ছড়িয়ে বিপর্যয়ের পর সেখানকার কয়েক হাজারেরও বেশি জেলে পরিবারের দিন কাটছে অলস।

অলীপ ঘটকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2014, 07:17 PM
Updated : 14 Dec 2014, 07:25 PM

নদী ও খালে তেল ভেসে থাকায় এসব জেলেরা জাল পেতে মাছ শিকার করতে পারছেন না।

এই অবস্থায় ভবিষ্যত নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন সুন্দরবনের নদী-খালের উপর নির্ভরশীল এসব জেলে পরিবার। কোনো কোনো পরিবার ইতোমধ্যে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে শুরু করেছে।

গত ৯ ডিসেম্বর শেলা নদীতে কার্গোর ধাক্কায় সাড়ে ৩ লাখ লিটার ফার্নেস অয়েলবাহী একটি অয়েল ট্যাংকার ডুবে গেলে তেল ছড়িয়ে পড়ে এই বিশ্ব ঐতিহ্যের মধ্যে থাকা নদী ও খালগুলোতে।

সুন্দরবনের লাগোয়া বাগেরহাটের মংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি, জয়মনিরঘোল, চরেরখাল এবং কাটাখালী গ্রামে সরেজমিন ঘুরে ও  জেলেদের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র উঠে এসেছে।

জয়মনি গ্রামের বাসিন্দা জেলে আয়ুব আলী (৪০) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শেলা নদীতে বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা এবং সাদা মাছ শিকার করে আমার সংসার চলে। কিন্তু গত মঙ্গলবার দুপুরের পর এই নদীতে থোকা থোকা তেল ভেসে আসতে শুরু করে।

“ওই সময়ে আমরা শেলা নদীতে কয়েকশ জেলে মাছ শিকার করছিলাম। ওই তেল দেখে আমরা নদী থেকে জাল তুলে নিয়ে বাড়িতে ফিরে আসি। ওই দিনের পর আমরা আর নদীতে জাল ফেলতে পারিনি। সংসার চালাতে আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।”

একই গ্রামের কালাম সরদার (৩৮) বলেন, “নেটজাল পেতে আমি বাগদা চিংড়ির রেণু পোনা সংগ্রহ করি। কিন্তু এখন ওই জাল পাতলে যদি তাতে নদীতে ভেসে থাকা তেল আটকে যায় তাহলে আমার ভীষণ ক্ষতি হয়ে যাবে।

“ওই নেটজাল কিনতে আমার প্রায় পাঁচ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। তাই আমরা নদীতে মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি। এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হবে।”

কাটাখালী গ্রামের অরবিন্দু রায় (৪২) বলেন, “নদীতে তেল ভাসার পর আমরা জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছি। আমাদের কিছু পরিবার নদীতে ভেসে থাকা তেল সংগ্রহ করে এবং বনভিাগের কাজে অংশ নিয়ে কিছু টাকা রোজগার করছে।

“তবে বড় অংশই হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে। এই অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে আমাদের চুলায় হাঁড়ি চড়বে না অনাহারে কাটাতে হতে পারে।”

চিলা ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. লুৎফর রহমান বলেন, “আমার ওয়ার্ডে চার থেকে পাঁচশ পরিবার সুন্দরবনের নদীখালে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। বুধবার থেকে ওই সব জেলে পরিবার নদীখালে মাছ শিকার বন্ধ রেখেছে।

“এই কয়দিন সংসার চালাতে তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। জেলেদের জালে তেল জড়িয়ে তা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় তারা বর্তমানে বসে রয়েছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তারা আবার স্বস্ব কর্মে ফিরে যেতে পারবে বলে আশা করছি।”

চিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ সফিকুল ইসলাম রাসেল বলেন, “এই ইউনিয়নে তিন থেকে চার হাজার পরিবার সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল। নদীখালে তেল ছড়িয়ে পড়ার পর তারা বর্তমানে নদীতে জাল ফেলা বন্ধ রেখেছে।

“তবে এর মধ্যে বেশকিছু পরিবার তেল তোলার কাজে যোগ দিয়েছে। ওই তেল বিক্রি করে অনেকে ভাল টাকা রোজগার করছেন। আর যারা তেল তুলতে পারছেন না তারা বেকার হয়ে বসে আছেন।”

তবে বনবিভাগ বলছে , এই অবস্থা সাময়িক। তাছাড়া এখন সুন্দরবনে ভাটা চলছে। এসময় এসব নদী -খালে মাছও কম পাওয়া যায়।

জেলেরা মাছ মিকার বন্ধ রেখেছেন স্বীকার করে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আমির হোসাইন চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের সংসার চালাতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে। তবে বর্তমানে বেকার বসে থাকা শতাধিক জেলেকে টাকার বিনিময়ে কাজে নিয়েছি তারা কাজ করছে এবং নদীতে ভেসে থাকা তেল তুলেও কিছু জেলে পরিবার ভাল টাকা আয় করছেন।

“এ সমস্যা সাময়িক। তাছাড়া ভাটার গোন চলায় এমনিতেই নদীতে এখন মাছ কম। আগামী অমাবশ্যায় জোয়ারের আগে এই সমস্যা কেটে যাবে এবং এসব জেলেরা আবার নদীতে মাছ শিকার শুরু করতে পারবে বলে আশা করছি।”

এদিকে রোববার সচিবালয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে সুন্দরবন অঞ্চলের এসব ক্ষতিগ্রস্ত কাঁকড়া,ঝিনুক ও মৎস্য আহরণকারীদের এক মাসের আপদকালীন ত্রাণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খন্দকার রাকিবুর রহমান।