‘বুকের রক্ত দিয়ে হলেও শহীদের স্বপ্ন রক্ষা’

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে ‘পাকিস্তানের দালাল’ আখ্যায়িত করে তারা যেন আর ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2014, 12:57 PM
Updated : 14 Dec 2014, 04:38 PM

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রোববার আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “ওই পাকিদের দালাল আর যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে সেজন্য দেশবাসীকে সতর্ক থাকতে হবে।

“লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত এই পতাকা নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। এই পতাকা নিয়ে কোনো শকুনীকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। দরকার হলে বুকের রক্ত দিয়ে দেব।”

রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে এই আলোচনা সভায় জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনীদের জিয়াউর রহমানের বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসে চাকরি দেওয়া এবং ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ের দিন বিএনপির হরতাল ঘোষণার কথা মনে করিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু কন্যা হাসিনা।

“বিএনপি নেত্রী খুনীদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। আজ যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন,” বলেন তিনি।

খালেদা জিয়ার শনিবারের নারায়ণগঞ্জের জনসভায় জামায়াত নেতা মুজিবুর রহমান ও রিদওয়ান উল্লাহ শাহিদী এবং ছাত্রশিবির নেতা ইয়াসির আরাফাত বক্তব্য দেন। এছাড়া মঞ্চে জামায়াত ও শিবিরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশস্থলে খালেদা জিয়ার পাশাপাশি যুদ্ধাপরাধে দণ্ডিত জামায়াত নেতাদের ছবি সম্বলিত বেলুনও উড়তে দেখা যায়।

এ প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের আগের দিন উনি কাদের নিয়ে বক্তৃতা করলেন। আল-বদর, রাজাকারদের নিয়ে উনি কীভাবে বক্তৃতা দিলেন? কারা ছিল ওই মঞ্চে? আল-বদর আর রাজাকাররা। কাদের ছবি ছিল ওই বেলুনে?”

যুদ্ধাপরাধের বিচারের বিষয়ে তার সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “ আল-বদর রাজাকারদের বিচার হবে। শকুনের দোয়ায় গরু মরে না। তাহলে দেশে আর গরু থাকত না। ওনার মতো শকুন বাংলাদেশে আছে। এখন আর দেশে শকুন পাওয়া যায় না। দেশে আর শকুন নেই। শুধু একটি শকুনী আছে।”

জিয়াউর রহমানের আমলে স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জিয়াউর রহমান শাহ আজিজ, গোলাম আযমকে ফিরিয়ে আনে। যেই গেলাম আযমের নাগরিকত্ব বাতিল করে দেওয়া হয়েছিল। ‘মার্শাল ল’ অর্ডিনেন্স দিয়ে সংবিধান সংশোধন করে তাদের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয় জিয়াউর রহমান।”

জিয়াউর রহমানের নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা অবৈধ ছিল মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, “সায়েম সাহেবকে হটিয়ে দিয়ে জিয়াউর রহমান নিজেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে।

“মার্শাল ল অর্ডিনেন্স দিয়ে এই রাজাকারদের বিচার বন্ধ করেছিল জিয়াউর রহমান। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে কাজ করতে চেয়েছিল, তাই যেন শুরু করে জিয়াউর রহমান।”

জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকতে দেশে ১৮টি সামরিক ক্যু হওয়ার কথা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “এক একটি ক্যু মানেই মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের হত্যা করা। কত আওয়ামী লীগ নেতাদের তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। তাদের লাশ খুঁজে পায়নি তাদের পরিবার।”

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো রাজনৈতিক দল অংশ না নিলেও বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনিদের দল ফ্রিডম পার্টিকে নিয়ে নির্বাচন করার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “উনি (খালেদা জিয়া) কর্নেল রশীদ ও হুদাকে নিয়ে ইলেকশন করে। কর্নেল রশীদকে বিরোধী দলের আসনে বসায়। এরপর ক্ষমতায় গিয়ে মুজাহিদ (আলী আহসান মুজাহিদ) ও নিজামীকে (মতিউর রহমান নিজামী) মন্ত্রী বানায়।”

‘বাংলাদেশকে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া আর ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করাই’ বিএনপি আর জামায়াতের লক্ষ্য ছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “বিডিআর বিদ্রোহে মদদ দেওয়া থেকে শুরু করে সরকারকে উৎখাত করতে একে একে সব কাজ করেছেন উনি।”

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনে সহিংসতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আর্মি অফিসার, বিজিবির অফিসার-সৈনিক, পুলিশ সদস্য, বাসের মধ্যে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে।”

বিডিআর বিদ্রোহের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করে খালেদা জিয়ার দেওয়া বক্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “ঘটনার দেড় ঘণ্টা আগে তিনি (খালেদা) কোনো প্রটোকল ছাড়াই ক্যান্টনমেন্টের বাসা ছেড়ে আন্ডার গ্রাউন্ডে চলে যান। এরপর দেড় মাস আর ওই বাসায় ফেরেননি।

“ওই ঘটনার পর যখন সমস্ত রাজনৈতিক দল বিদ্রোহ থামানের জন্য ছুটে যান তখন তিনি কোথায় ছিলেন? উনি কী ষড়যন্ত্র করেছিলেন? কোন আকাঙ্ক্ষায় তিনি আন্ডার গ্রাউন্ডে যান? ভেবেছিলেন কিছু একটা ঘটবে তারপর তিনি আসবেন। সেদিন উনি কোথায় পালিয়ে গিয়েছিলেন তার জবাব জাতিকে দিতে হবে।”

বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিএনপির সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “খালেদা জিয়া ও তার দল বিডিআর মিউটিনিতে জড়িত না থাকলে তাদের আইনজীবীরা কীসের স্বার্থে খুনীদের পক্ষ নিয়েছেন?”

কোন কোন আইনজীবী বিডিআর বিদ্রোহের মামলার আসামিদের পক্ষে লড়েছেন তার তালিকা সরকার তৈরি করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত , কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সাহারা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ, ঢাকা নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, শহীদ বুদ্ধিজীবী সিরাজ উদ্দীনের ছেলে তৌহিদ রেজ নূর ও শহীদ বুদ্ধিজীবী আবদুল আলীমের মেয়ে ডা. নুজহাত চৌধুরী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।