বেতন বাড়লে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে, শঙ্কায় মন্ত্রী

সরকারি চাকুরেদের বেতন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মূল্যস্ফীতিও বাড়বে বলে শঙ্কায় আছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2014, 11:12 AM
Updated : 14 Dec 2014, 11:26 AM

বাজার পরিস্থিতি সহনীয় রাখতে বেতন ধাপে ধাপে বাড়ানোর পক্ষপাতি তিনি। শুধু তাই নয় বাড়তি বেতনের অর্থ বিনিয়োগে ব্যবহারের পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন বেতন কাঠামো চলতি ডিসেম্বরেই ঘোষণার কথা রয়েছে। এতে বেতন দ্বিগুণের মতো বাড়ছে বলে গণমাধ্যমের খবর।

এর মধ্যেই রোববার সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রীও বলেন, বেতন ৭৫ থেকে ১০০ শতাংশ বাড়ছে বলে তিনিও শুনছেন।

“৭৫ শতাংশও যদি বাড়ে; আর তার পুরোটা যদি বাজারে একইসঙ্গে আসে, তাহলে বাজারের খবর আছে। সবাই বড় বড় চিংড়ি মাছ কিনবে; বাড়তি খরচ করবে। বেড়ে যাবে মূল্যস্ফীতি।”

“কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়তি বেতনের টাকা বাজারে এলে তোমাদেরও খবর আছে,” সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন তিনি।

গত ছয় মাস ধরে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে (মাসভিত্তিক) মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ২১ শতাংশ।

ছয় দিন আগে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করতে গিয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছিলেন, অর্থবছর শেষে গড় মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশের কাছাকাছি নেমে আসবে।

২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও।

তবে এর মধ্যে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাড়লে মূল্যস্ফীতির রাশ টানার লক্ষ্য যে হুমকির মুখে পড়বে, তা পরিকল্পনামন্ত্রীর কথায় স্পষ্ট।  

সরকারি কর্মীদের বেতন বাড়াতে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন নেতৃত্বাধীন ১৭ সদস্যের কমিশন এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ করছে। এই মাসেই তারা প্রতিবেদন দেবেন বলে প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।

বেতন বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভিন্ন প্রক্রিয়ার প্রস্তাব করে মুস্তফা কামাল বলেন, “সবটা একসঙ্গে না বাড়িয়ে ধাপে ধাপে বাড়ানো যেতে পারে। এখানে বিনিয়োগের বিষয়টিও চিন্তা করা যেতে পারে।

“কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাড়তি বেতনের একটি অংশ সরকারের কাছে সঞ্চয় হিসেবে জমা থাকবে। সরকার ওই টাকা বিনিয়োগে ব্যবহার করবে। তাহলে তাদেরও সুবিধা হবে; দেশেরও উন্নয়নমূলক কাজও হবে।”

‘অর্থনীতিতে সেভিংস ও ইনভেস্টমেন্ট টার্ন আনতে হবে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, জাতীয় আয়কে বিনিয়োগে পরিণত করা গেলে তবেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়।

উদাহরণ দিতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, “একজন রিকশাচালক দিনে পাঁচ-ছয়শ টাকা আয় করে। তার পুরোটাই পরিবারের পেছনে ব্যয় করে। অনেকে আবার নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে টাকা খরচ করে।

“এই রিকশাচালকদের প্রতিদিনের বাড়তি আয়ের (প্রয়োজনীয় খরচ শেষে যেটা থাকে) ১০০ টাকাও যদি সঞ্চয়ের ব্যবস্থা করে সেই টাকা বিনিয়োগের মাধ্যমে তাদের বাড়ির (বাসস্থানের) ব্যবস্থা করে দেওয়া যায়, তাহলে খুবই ভালো হবে।”

সরকার এই ধরনের একটি প্রকল্প নেওয়ার কথা ভাবছে বলে জানান মুস্তফা কামাল।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে পরিকল্পনা সচিব ভূঁইয়া সফিকুল ইসলাম এবং সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জিইডি) শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন।