বর্ধমানকাণ্ডে গ্রেপ্তারদের বাংলাদেশি গোয়েন্দাদের জিজ্ঞাসাবাদ

বাংলাদেশের জঙ্গিদের সঙ্গে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংগঠনগুলোর সংশ্লিষ্টতা খতিয়ে দেখতে বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।

কলকাতা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2014, 07:51 PM
Updated : 28 Nov 2014, 07:51 PM

সাত সদস্যের বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পৌঁছায়।

এরপরই তারা সল্টলেক এলাকায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) দপ্তরে অবস্থিত ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) কার্যালয়ে ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজনকে প্রথম দফা ওই জিজ্ঞাসাবাদ করেন বলে এনআইএর একটি সূত্র জানিয়েছে।

গত ২ অক্টোবর বর্ধমানের একটি বাড়িতে বিস্ফোরণে নিহত দুজন বাংলাদেশের নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়েতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্য বলে  ভারতীয় গোয়েন্দাদের সন্দেহ।

ওই ঘটনায় জড়িত অভিযোগে সম্প্রতি ভারতের হায়দ্রাবাদ থেকে গ্রেপ্তার খালিদ মোহাম্মদ ওরফে খালিদ মিয়ানমারের নাগরিক এবং তিনি রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগাইজেশনের (আরএসও) সদস্য বলে জানিয়েছে এনআইএ।

তার এই পরিচয় বেরোনোর পর মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশি জঙ্গিদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি গোয়েন্দাদের নজরে আসে।

খালিদ মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে জঙ্গি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালান এবং তার সঙ্গে পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী তেহরিক-ই-ইসলামের যোগাযোগ থাকার অভিযোগ রয়েছে।

বর্ধমান বিস্ফোরণে গ্রেপ্তার খালিদ, শেখ রহমাতুল্লাহ সাজিদ ও হাকিমকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ করে দিতে বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের হেফাজতে নেয় এনআইএ।

এর মধ্যে সাজিদের বাড়ি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে এবং তিনি জেএমবির একজন কমান্ডার বলে ভারতীয় গোয়েন্দাদের দাবি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনআইএর একাধিক সূত্র জানায়,  শুক্রবার সন্ধ্যায়ও আরেক দফায় গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বাংলাদেশের গোয়েন্দারা।

বর্ধমানের বিস্ফোরণস্থল থেকে নিহত দুইজনের স্ত্রীদের গ্রেপ্তার করে ভারতীয় গোয়েন্দারা। এই দুই নারীও জেএমবি’র সঙ্গে জড়িত বলে তারা জানিয়েছেন।

বাংলাদেশে হামলা চালানোর জন্যই বর্ধমানের ওই বাড়িতে বোমা তৈরি করা হচ্ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে বলেছেন তারা।

ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের দাবি, বর্ধমানের বিস্ফোরণের ওই ঘটনায় গ্রেপ্তার সাজিদ ও তার সূত্র ধরে গ্রেপ্তার জিয়াউল নামের আরেক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদের পরপরই বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যায় জঙ্গিদের একটি পরিকল্পনা জানতে পেরেছেন তারা।         

এর জের ধরে তদন্ত করতে গত ৭ নভেম্বর ভারতীয় গোয়েন্দাদের চার সদস্যের একটি দল বাংলাদেশে আসে। 

তখন র‌্যাবের সঙ্গে ভারতীয় গোয়েন্দারা অপরাধী তালিকা বিনিময় করে। বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনসহ ১১ সন্ত্রাসীর নামের একটি তালিকা র‌্যাবকে দেয় এনআইএ।

অন্যদিকে ভারতে পালিয়ে থাকা ১০ জঙ্গিসহ ৫১ অপরাধীর একটি তালিকা ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থাকে দেয় র‌্যাব।

এনআইএ প্রতিনিধি দলের সফরের এক সপ্তাহের মধ্যে বাংলাদেশের গোয়েন্দারাও তথ্য সংগ্রহে ভারতে এলেন।

গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলে রয়েছেন এনএসআইর পরিচালক কর্নেল আবু হেনা মোস্তফা কামাল, র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) অতিরিক্ত ডিআইজি আজিজুর রহমান, সিআইডির এসএস আশরাফুল ইসলাম, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (ডিজিএফআই) মেজর আতিক এবং পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তা মাহফুজ আহমেদ।