ওই তত্ত্ব নিয়ে ডুবতে চাই না: হাসিনা

কারো ‘তত্ত্ব’ নিয়ে ব্যর্থ না হয়ে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করার নীতিতে সরকার কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Nov 2014, 03:36 PM
Updated : 29 Nov 2014, 11:18 AM

শুক্রবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের শুরুতে তিনি বলেন, “অনেকে অনেক কথা বলেন। এ সম্ভাবনা, ও সম্ভাবনা। অতো সম্ভাবনার অতো থিওরি দিয়ে লাভ নেই।”

কারো নাম উল্লেখ না করেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যাদের থিওরি আকাশে বাতাসে পত্রিকায় সব জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে তাদের থিওরি আমরা জানি।

“তত্ত্বাবধায়ক তাদের থিওরি নিয়ে ডুবে গেছে। ওই থিওরি নিয়ে আমরা ডুবতে চাই না।”

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “একটা থিওরিই বুঝি- বাংলাদেশের মানুষকে পেট ভরে ভাত খাওয়াতে হবে, গৃহহারা মানুষের গৃহের ব্যবস্থা করতে হবে, বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে, রোগে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে, মানুষের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে হবে। আমরা ওইটুকু থিওরি নিয়েই চলি। আমরা ওইটুকু থিওরিই কার্যকর করতে চাই।”

কয়েকটি ক্ষেত্রে সরকারের লক্ষ্য পূরণ হওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা পারি, আমরা পারব। যে কোনো অবস্থা মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়া- এটা কেবল বাঙালিরাই পারে।”

তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছে। তাই, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে- দেশের মানুষ কিছু পায়।”

কর্মসংস্থান সৃষ্টির ফলে দ্রব্যমূল্য কমেছে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকারের দক্ষ অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৬ এ নেমে এসেছে। এর ফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছে।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিলাম। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করেছি। দক্ষিণ এশিয়াসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলো যা পারে নাই আমরা তার বেশি অর্জন করতে পেরেছি।”

ছয় শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা এবং মাথাপিছু আয় এক হাজার ১৯০ ডলার হওয়ার কথাও উল্লেখ করেন তিনি।

দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৪ ভাগে নেমে আসার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আশাকরি, আগামী পাঁচ বছরে ১০ ভাগের কাছাকাছি কমিয়ে আনতে সক্ষম হব। এমডিজির লক্ষ্যের থেকে বেশি অর্জন করতে পারব- এই বিশ্বাস আমাদের আছে।”

গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ব্যাপক হারে মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। এতো ব্যাপক হারে কর্মসংস্থান অতীতে কোনো সরকার করতে পারে নাই। গত পাঁচ বছরে এক কোটি মানুষের কাছাকাছি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আমরা করতে পেরেছি।”

পাঁচ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে আট হাজার ডাকঘর ডিজিটাল সেন্টারে রূপান্তর করা হবে।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “অর্থ বানাবে- ঠিক আছে। কিন্তু এতিমের টাকা চুরি করে খাবে কেন?

“এতিমের টাকা চুরি করে খেল, আর দোষ নাকি আমাদের।”

তিনি বলেন, “২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি তো স্পেশাল এজেন্ট রেখে তন্নতন্ন করে খুঁজেছে। বিশ্ব ব্যাংক আমাদের দুর্নীতিবাজ বানাতে কতো চেষ্টা, পদ্মা সেতু বন্ধ করে দিল। দুর্নীতি খুঁজতে খুঁজতে হয়রান হয়ে গিয়ে বলল, দুর্নীতি পায়নি।”

শেখ হাসিনা বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো মিথ্যা ছিল।

“প্রত্যেকটি মামলার তদন্ত হয়েছে। তারা নিজেরাও করেছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারও করেছে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংক করেছে। তারা কিছু পায়নি।

“যার বিরুদ্ধে পাওয়া গেল, তিনি আমাদের দুর্নীতি খোঁজে। এটা অবাক কাণ্ড।”

দুর্নীতি মামলা মোকাবেলা করে নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “এতিমের টাকা মেরে খাননি- তা প্রমাণ হোক। কোর্টে প্রমাণ হোক।”

সারাদেশে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন থেকে শুরু করে জেলা পর্যায়ে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলনে মানুষের ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।

“আওয়ামী লীগের ওপর যে মানুষের আস্থা ভরসা- সেটাই প্রতীয়মান হয়,” বলেন তিনি।

এই বৈঠকে আগামী ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যা দিবস, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস এবং ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কর্মসূচি চূড়ান্ত করার কথা বলেন শেখ হাসিনা।