বৃহস্পতিবার ভোররাতের দিকে বঙ্গোপসাগরে জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যাওয়া মাছধরা ট্রলার এফভি বন্ধনে কাজ করতেন সোহাগের ছোট ভাই রবিউল আহসান (২২) এবং বাবুলের বড় ভাই মোখলেসুর রহমান। ডুবে যাওয়ার সময় ট্রলারের ২৯ জন মাল্লা আর জেলের সঙ্গে তারা দুজনও ছিলেন।
দুর্ঘটনার খবর পেয়েই নিখোঁজদের সন্ধানে অন্যদের মতো বেঙ্গল ফিশারিজের কার্যালয়ে ছুটে এসেছেন সোহাগ আর বাবুল। উদ্ধারকৃত নাছির ফকিরের (৩৫) লাশের অপেক্ষাও আছেন স্বজনরা।
অনেকে সাথে করে নিয়ে এসেছেন নিখোঁজদের ছবি। কেউ মোবাইল ফোনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন।
বেঙ্গলের কার্যালয়ের সামনে নিখোঁজদের স্বজনের কান্না আর আহাজারিতে রীতিমত হৃদয়বিদারক পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
কিন্তু ভোর থেকে বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনো কিছু জানাতে পারেননি তারা। এমনকি মালিকপক্ষের কোনো কর্তার দেখা না পেয়ে ক্ষোভও ঝেড়েছেন অনেকে।
বৃহস্পতিবার ভোর রাত সাড়ে ৩টার দিকে কক্সবাজারের সেন্টমার্টিন উপকূল থেকে ৩০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের ১১ নম্বর পয়েন্টে জাহাজের ধাক্কায় ডুবে যায় চট্টগ্রামের বেঙ্গল ফিশারিজের মালিকানাধীন ‘এফভি বন্ধন’।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে নৌবাহিনীর সদস্যরা একজনকে মৃত ও দুইজনকে জীবিত উদ্ধার করলেও বাকিরা এখনো নিখোঁজ।
পিরোজপুরের হবিগঞ্জ উপজেলার গন্তব্যপুর গ্রামের রবিউল তিনমাস আগে ‘বন্ধনে’ কাজে যোগ দিয়েছিলেন।
বড়ভাই সোহাগ জানান, পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ রবিউল। তাদের আরেক এক বড় ভাই মো. সেলিমও একই প্রতিষ্ঠানের ‘এফভি উদ্যম’ এ কাজ করেন।
সোহাগ বলেন, “গত ১৭ নভেম্বর ট্রলারটি চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যায়। এরপর থেকে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়নি। বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে তার সঙ্গে শেষবারের মতো ফোনে কথা হয়।
“ভোরে বড় ভাই সেলিমের কাছ থেকে খবর পেয়ে রবিউলের বিষয়ে মালিকপক্ষের সঙ্গে কথা বলার জন্য এসেছি।”
কিন্তু বিকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করে ভাইয়ের কোনো তথ্য পাননি সোহাগ।
ট্রলারের শ্রমিক মোখলেসের ছোটভাই বাবুল খানও মালিকপক্ষের কাউকে না পেয়ে ক্ষোভ জানালেন।
“সকাল থেকে বসে থাকলেও এখনও পর্যন্ত মালিকপক্ষের কেউ আমাদের সঙ্গে কথা বলতে আসেনি।”
ট্রলার ডুবির ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি করেছে নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের প্রকৌশলী (শিপ সার্ভেয়ার) এ এস এম সিরাজুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত তিন সদস্যের কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।