বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ময়মনসিংহের নান্দাইল চৌরাস্তা এলাকা থেকে শামসুদ্দিন আহম্মেদকে ধরা হয় বলে কিশোরগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লিটন কুমার জানিয়েছেন।
বর্তমানে তিনি কিশোরগঞ্জ মডেল থানা পুলিশের ফেহাজতে রয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানার শামসুদ্দিন ও তার ভাই নাছির উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে ক্যাপ্টেন এটিএম নাছিরের বিরুদ্ধে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন বুধবার ট্রাইব্যুনালে জমা পড়ে।
তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, নির্যাতন, গণহত্যাসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থার জ্যেষ্ঠ সদস্য সানাউল হক জানান,এ দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ৬ জুন তদন্ত কাজ শুরু হয়। এক বছর ৫ মাস ১৮ দিন তদন্ত করে ২৪ নভেম্বর তদন্ত কাজ শেষ হয়। তাদের বিরুদ্ধে ৬০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ৪০ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধে শুরু হওয়ার পরে তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে অস্বীকার করে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীকে সহায়তা করার জন্য রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেন।
দুই ভাই সশস্ত্র অবস্থায় করিমগঞ্জ থানা এলাকার বিদ্যানগর, আয়লা, রামনগর, কলাতলি ও করিমগঞ্জে হত্যা, নির্যাতন ও গণহত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ত হন বলে তদন্ত কর্মকর্তাদের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।
তারা বলছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে নাসির উদ্দিন এলাকা ছেড়ে পালিয়ে নিজের নাম-পরিচয় বদলে চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে লেখাপড়া শেষ করেন। ভুয়া পরিচয় ও ঠিকানা দিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ১৯৯৪ সালের ৫ জুলাই কমিশন লাভ করেন তিনি।
২০০২ সালের ১৩ জানুয়ারি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে ক্যাপ্টেন হিসেবে অকালীন বাধ্যতামূলক অবসরে যান নাসির উদ্দিন। এরপর নিজের এলাকায় ফিরে যান তিনি।
আর শামসুদ্দিন আইন পেশায় নিয়োজিত বলে তদন্ত কর্মকর্তারা জানান।
দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে ৫ অভিযোগ
অভিযোগ-১: ১৯৭১ সালের ২৭ অক্টোবর কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ থানাধীন আয়লা গ্রামে নাছির উদ্দিন ও শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী লুণ্ঠন,অন্যায় আটক ও নির্যাতন চালায়। পরে মুক্তিযোদ্ধার পিতা আব্দুল বারেকসহ মো. হাবিবুল্লাহ, শেখ চান্দু মিয়া,শেখ মালেক, আফতাব উদ্দিন, সিরাজ উদ্দিন, আব্দুল জব্বার ও আব্দুল মজিদকে গুলি করে হত্যা করে। পরে এদের সবার লাশ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ-২: ১৯৭১ সালের ১১ নভেম্বর এটিএম নাছিরের নেতৃত্বে করিমগঞ্জ থানাধীন আয়লা গ্রামে লুণ্ঠন,অন্যায় আটক ও নির্যাতন চালায়। পরে মিয়া হোসেন নামের একজনকে গুলি করে হত্যা করে। পরে তার লাশ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ-৩: ১৯৭১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর করিমগঞ্জের কলাতলি গ্রামে নাছির উদ্দিন ও শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী আব্দুল গফুর নামে একজনকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে নির্যাতন চালায়। পরে খুদির জংগল ব্রিজে নিয়ে গুলি করে তাকে হত্যা করে। পরে তার লাশ পাওয়া গেছে।
অভিযোগ-৪: ১৯৭১ সালের ২৩ অগাস্ট করিমগঞ্জের বাজার ঘাট থেকে নাছির উদ্দিন ও শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে রাজাকার বাহিনী ফজলুর রহমান মাষ্টার নামে একজনকে আটক করে কিশোরগঞ্জ আর্মি ক্যাম্পে পাঠায়। সেখানে তাকে নির্যাতনের পরে হত্যা করা হয়। তবে তার লাশ পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ-৫: ১৯৭১ সালের ৭ সেপ্টেম্বর করিমগঞ্জের রামনগর গ্রামে শামসুদ্দিনের নেতৃত্বে তারই সহপাঠী পরেশ চন্দ্র সরকারকে আটক করে নির্যাতনের পরে তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে তার লাশ পাওয়া গেছে।