সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের তথ্য যাচাইয়ের জন্য র্যাবের এই তথ্যভাণ্ডার বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনে সংরক্ষিত জাতীয় পরিচয়পত্র তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গেও যুক্ত করা হয়েছে।
এর ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে র্যাবের হাতে থাকা তথ্যের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারবেন তদন্তকারীরা।
এ উপলক্ষে র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, “অপরাধীরাও প্রযুক্তি নির্ভর। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে না চললে সব পরিকল্পনা মুখ থুবড়ে পড়বে। এ জন্যই পুলিশ-র্যাবের আধুনিকায়ন হচ্ছে।”
প্রতিমন্ত্রী জানান, ভারতের বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনায় কলকাতায় গ্রেপ্তার শেখ রহমাতুল্লাহ ওরফে বুরহান শেখ ওরফে সাজিদই যে নারায়ণগঞ্জের মাসুম মিয়া ওরফে মাসুদ, সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে র্যাবের এই ক্রিমিনাল ডেটাবেইজ থেকেই।
সম্প্রতি ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থার (এনআইএ) প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে এলে সাজিদের সেই তথ্য তাদের হস্তান্তর করা হয় বলে জানান তিনি।
র্যাব কর্মকর্তারা জানান, ২০০৫ সালে কোটালীপাড়ায় ব্র্যাক ব্যাংকে ডাকাতির মামলায় এবং পরে ২০১২ ঢাকায় মাসুদ ওরফে সাজিদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। দ্বিতীয়বার ধরা পড়ার পর তার দশ আঙ্গুলের ছাপ এবং দুই চোখের রেটিনা স্ক্যান করে ক্রিমিনাল ডেটাবেইজে সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
র্যাবের মহাপরিচালক মোখলেছুর রহমান, মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট প্রকল্পের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাসুদ রেজওয়ান, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইফতেখার উদ্দিন, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসানসহ র্যাবের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
র্যাবের প্রযুক্তিনির্ভর এই তথ্যভাণ্ডারের যাত্রা শুরু হয় ২০১১ সালে। তবে এতোদিন জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে সংরক্ষিত তথ্যের সঙ্গে তা মিলিয়ে দেখার সুযোগ ছিল না। নির্বাচন কমিশনের নেটওয়ার্কে যুক্ত হওয়ায় ফলে এখন সেই সুযোগ তৈরি হলো বলে র্যাব কর্মকর্তারা জানান।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান অনুষ্ঠান শেষে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, দেশের ৬৭টি কারাগারের মধ্যে ৬৪টি কারাগারের ২৮ হাজার সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীর তালিকা এই তথ্যভাণ্ডারে সংরক্ষণ করা হয়েছে। বাকিরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ঘটনায় র্যা্বের হাতে আটক বা গ্রেপ্তার হয়েছেন।
“নির্বাচন কমিশনের পর এবার মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন অথরিটির (বিআরটিএ) ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং সিটি কর্পোরেশনের জন্ম নিবন্ধন তথ্য ভাণ্ডারের সঙ্গেও ‘ক্রিমিনাল ডেটাবেইজ’ এর যোগাযোগ ঘটানোর কাজ চলছে। শিগগিরই এসব প্রতিষ্ঠানের ডেটাবেইজের সঙ্গে যুক্ত হওয়া যাবে।”
এতে দুপক্ষই লাভবান হবে মন্তব্য করে জিয়াউল আহসান বলেন, “অপরাধীদের সনাক্ত করাও সহজ হয়ে আসবে।”
বিভিন্ন মামলায় দেশের কারাগারগুলোতে প্রতিদিন যাদের আনা হচ্ছে তাদের প্রত্যেকের তথ্যও এই ডেটাবেইজে রাখার একটি প্রস্তাব প্রতিমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে জিয়া বলেন, “প্রতিমন্ত্রী এই প্রস্তাব যুগোপযোগী বলে সম্মতি দিয়েছেন।”
সাইবার সন্ত্রাস রোধে পুলিশের অধীনে একটি নতুন ইউনিট খোলার কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কামাল অনুষ্ঠানে বলেন, “যেভাবে সাইবার ক্রাইম বাড়ছে তা রোধে সাইবার ইউনিট গঠন করা হচ্ছে, যা পুলিশের তত্ত্বাবধানেই চলবে।”
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও শিল্প পুলিশ চালু হওয়ায় সাধারণ মানুষ উপকৃত হচ্ছে। নৌ পুলিশও করা হয়েছে।
নৌপথে অপরাধ দমনে বিশেষায়িত এই পুলিশ বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
“র্যাব এখন আস্থার জায়গায় এসেছে। তবে দু’একটি ব্যাতিক্রম হচ্ছে না- তা নয়। আইনের ঊর্ধ্বে কেউ না। অপরাধ করলে সাজা পেতে হবে এবং র্যাবের ক্ষেত্রেও তা হয়েছে।”
প্রতিমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের একজন ঘন ঘন নাম পরিচয় পরিবর্তন করে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করছে। উন্নত প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে তাকে চিহ্নিত করার চেষ্টা হচ্ছে।
হাসান মাহমুদ খন্দকার অনুষ্ঠানে বলেন, “অপরাধীরা যেমন এগিয়েছে, প্রযুক্তির দিক দিয়ে আইনশঙ্খলা বাহিনীও এগিয়েছে। আর এটা অপরাধীদের জন্য সর্তকবার্তা যে, তারা অপরাধ করে ছাড় পাবে না।”
হাসান মাহমুদ খন্দকার বলেন, “র্যাবকে বিশেষ ধরনের অপরাধ দমনের জন্য তৈরি করা হয়েছে। দীর্ঘ ১০ বছরে র্যাব জনগণের আস্থার জায়গায় পৌঁছেছে। এটা ধরে রাখতে হবে।”
মোখলেছুর রহমান বলেছেন, “র্যাবের ডেটাবেইজ আজ সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছে। এভাবে র্যাব এগিয়েছে জনগণের প্রয়োজনেই।”
অনুষ্ঠান শেষে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জনবল বাড়াতে ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগের অংশ হিসাবে প্রাথমিকভাবে ১৭ হাজারের নিয়োগ প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।
সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রুখতে সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা জানিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে এক অনুষ্ঠানে ধাপে ধাপে ৫০ হাজার পুলিশ নিয়োগের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা এই বাহিনীর জনবল সংখ্যা বর্তমানে প্রায় ১ লাখ ৫৬ হাজার।