প্রবীণদের স্বস্তির দায়িত্ব সন্তানকে নিতে হবে: রাষ্ট্রপতি

ষাট বছর ও তার বেশি বয়সীদের দেশের জ্যেষ্ঠ নাগরিক (সিনিয়র সিটিজেন) ঘোষণা করে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, যারা এ সমাজ গড়ছেন, তাদের শেষ জীবন স্বস্তিময় করতে সন্তানদেরেই দায়িত্ব নিতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2014, 10:38 AM
Updated : 27 Nov 2014, 10:39 AM

এই ঘোষণার ফলে বাংলাদেশের ১ কোটি ৩০ লাখ নাগরিক বিভিন্ন সরকারি সুবিধা পাবেন। জ্যেষ্ঠ নাগরিকদের স্বল্পমূল্যে ও অগ্রাধিকারভিত্তিতে স্বাস্থ্য, আবাসন ও যানবাহনের সুবিধা পাবেন।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বলেন, "সমাজ ও রাষ্ট্রে প্রবীণদের সম্মান জানানোর জন্য এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমি বাংলাদেশের সকল সম্মানিত প্রবীণকে সিনিয়র হিসেবে ঘোষণা করছি। সাথে সাথে তাদের সুস্বাস্থ্য, মর্যাদাপূর্ণ জীবন এবং সার্বিক কল্যাণ কামনা করছি।"

তিনি বলেন, “পরিবারই প্রবীণ নাগরিকের সবচেয়ে স্বস্তিময় ও নিরাপদ স্থান। এ কারণে পরিবারে যাতে প্রবীণ ব্যক্তিরা স্বাচ্ছন্দ্য ও মর্যাদার সাথে অন্য সদস্যদের সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ পরিবেশে বসবাস করতে পারেন, তার দায়িত্ব সন্তানদের নিতে হবে।”

পশ্চিমা দেশগুলোর মতো নির্ধারিত দিনে ‘ফাদার’স ডে’ বা ‘মাদার’স ডে’ উদযাপন না করে বাংলাদেশে প্রতিটি দিন প্রতিটি পরিবারে ‘প্যারেন্ট’স ডে’ উদযাপিত গবে- বিশ্ব প্রবীণ দিবসে এ প্রত্যাশাও করেন রাষ্ট্রপতি।

বয়স্কদের প্রতি সম্মান দেখানোর ঐতিহ্যের কথা মনে করিয়ে দিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “প্রবীণ জনগোষ্ঠী আমাদের গুরুজন এবং পথ প্রদর্শক। তাদের যথাযথ মর্যাদা, খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, বসবাসের সুবিধাসহ সামাজিক সম্মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সকলকে আন্তরিক হতে হবে। এ জন্য আমাদের ঐতিহ্যগত পারিবারিক বন্ধন আরও দৃঢ় করতে হবে। পাশাপাশি শৈশব থেকেই শিশুদের গুরুজনদের সম্মান করার সুমহান শিক্ষা দিতে হবে। কারণ এটাই আমাদের চিরকালীন ঐতিহ্য।”

প্রবীণদের জ্যেষ্ঠ নাগরিকের স্বীকৃতি দিতে ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর জাতীয় প্রবীণ নীতিমালার খসড়া অনুমোদন করে সরকার। এরপর জাতীয় অধ্যাপক এম আর খানের নেতৃত্বে একটি কমিটি এ বিষয় কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, “প্রবীণদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানসহ তাদের যত্ন নেওয়া ছিল আমাদের প্রচলিত মূল্যবোধের ঐতিহ্যগত অংশ। কিন্তু বর্তমানে আর্থ-সামাজিক নানা কারণে যৌথ পরিবারগুলো ভেঙে যাচ্ছে। প্রবীণদের প্রতি সহানুভূতি কমছে, বাড়ছে অবহেলা, তারা শিকার হচ্ছেন নানাবিধ বঞ্চনার।”

সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে প্রবীণরা নিজ পরিবারেই ক্ষমতা ও সম্মান হারাচ্ছেন এবং অনেক ক্ষেত্রে একাকিত্ব জীবন যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন ৭০ বছর বয়সী আবদুল হামিদ।

“আর্থিক দীনতার পাশাপাশি চিকিৎসা সুবিধা বঞ্চিত অনেক প্রবীণ আজ সামাজিক নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি। সমাজের এই বিপুল প্রবীণ অসহায় জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানো আমাদের সকলের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব।”

রাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমানে দেশে  মোট জনসংখ্যার প্রায় ৮ ভাগ, অর্থাৎ ১ কোটি ৩০ লাখ নাগরিক প্রবীণ। আগামী ২০২৫ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দাঁড়াবে প্রায় ১ কোটি ৮০ লাখ এবং ২০৫০ সালে প্রায় ৪ কোটি। ২০৫০ সাল নাগাদ এ দেশের প্রায় ২০ শতাংশ নাগরিক হবেন প্রবীণ।

“এই হিসাবে আগামীতে দেশের আর্থ-সামাজিক ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে বার্ধক্যই হবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আপনারা জানেন, প্রবীণদের প্রায় ৮০ ভাগ গ্রামে বসবাস করছেন। তাদের সুস্থ ও স্বস্তিময় জীবন যাপনের জন্য পরিবার, সমাজ তথা রাষ্ট্রের মূল স্রোতধারায় সম্পৃক্ত রাখা প্রয়োজন।”

প্রবীণদের নিরাপদ জীবনযাপন নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আবদুল হামিদ বলেন, “সমাজ ও রাষ্ট্রে বয়স্ক ব্যক্তিদের অবদান অপরিসীম। জীবনের শেষ প্রান্তে উপনীত হয়ে তারা যাতে মর্যাদা, স্বস্তি ও নিরাপদে জীবন যাপন করতে পারেন, তার সকল ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে। হাসপাতাল, ব্যাংক, অফিস, আদালতসহ নাগরিক সেবার সর্বক্ষেত্রে তাদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।”

রাষ্ট্রপতি তার বক্তব্যে প্রবীণদের কল্যাণে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচির প্রশংসা করেন এবং বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠগুলোকে এ কাজে আরো এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান, সমাজকল্যাণ সচিব নাছিমা বেগম, প্রবীণ হিতৈষী সংঘের মহাসচিব এ এস এম আতীকুর রহমান বক্তব্য দেন।