প্রশ্ন ফাঁস ঠেকাতে ‘প্রয়োজনে’ মোবাইল-ফেইসবুক বন্ধ!

প্রতিটি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ নিয়ে তুমুল সমালোচনার মধ্যে দৃশ্যত দিশেহারা শিক্ষামন্ত্রী বললেন, পাবলিক পরীক্ষার সময় ‘প্রয়োজনে’ মোবাইল ফোন ও ফেইসবুক বন্ধ করে দেওয়া হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Nov 2014, 08:26 AM
Updated : 27 Nov 2014, 06:33 PM

২০১৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা নিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ের এক সভায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে ‘আইন খতিয়ে দেখারও’ নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টা করলে ‘হাত ভেঙে দেওয়া হবে’ বলেও তিনি হুমকি দিয়েছেন।

সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে সভায় নাহিদ বলেন, “আগামী প্রজন্ম মোবাইল ফোনের জন্য নষ্ট হয়ে যাবে তা ঠিক নয়। প্রয়োজনে আইন দেখেন- প্রয়োজনে পরীক্ষার দিন মোবাইল ফোন বন্ধ করে দেব। প্রয়োজনে ফেইসবুকও বন্ধ করে দেব।”

গত রোববার থেকে শুরু হওয়া প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনীর বাংলা ও ইংরেজি পরীক্ষার আগে হুবহু প্রশ্ন পাওয়া যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমসহ বিভিন্ন পর্যায়ে সমালোচনা হচ্ছে।

তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ ধরনের সংবাদকে ‘গুজব’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে। আর এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান কোনো জেলাতেই প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাওয়া যায়নি দাবি করে বলেছেন, প্রশ্ন ফাঁস হলে তার দায় তিনি নিজের কাঁধে নেবেন।

এর আগে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জেএসসি পরীক্ষাতেও বিভিন্ন বিষয়ের প্রশ্ন আগেই ফেইসবুকে প্রকাশের খবর পাওয়া যায়। এসব ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়।

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে সরকারকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময়ও। উচ্চ মাধ্যমিকে অভিযোগের সত্যতা মেলায় ঢাকা বোর্ডের ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা দ্বিতীয়বার নেওয়া হয়।

এই প্রেক্ষাপটে গত অগাস্টে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ফাঁস হওয়া ঠেকাতে পাবলিক পরীক্ষার জন্য ৩২ সেট প্রশ্নপত্র তৈরি করা হবে। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে ‘বিভ্রান্তি সৃষ্টি’ ও ‘মিথ্যা রটনা’র দায়ে জেল-জরিমানা করতে আইন সংশোধন করা হবে।

প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে সোচ্চার হওয়া শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ জাফর ইকবাল উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার সময় একটি বিষয়ের ‘ফাঁস হওয়া’ প্রশ্নপত্র ইন্টারনেটে তুলে দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান। কিন্তু সরকার ব্যবস্থা না নেয়ায় পরীক্ষা চলাকালেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তিনি।

চলমান প্রাথমিক সমাপনীর ‘বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়’ বিষয়ের ফাঁস হওয়া ও মূল প্রশ্নপত্রও তিনি বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক নিবন্ধে হাজির করেছেন। তিনি লিখেছেন, “আমাদের শিশুদের লেখাপড়ার দরকার নেই, দোহাই আপনাদের, তাদের ক্রিমিনাল করে বড় করবেন না!”  

এর পরদিনই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে শিক্ষামন্ত্রীর ক্ষোভের প্রকাশ ঘটল।

তিনি বললেন, “প্রশ্ন ফাঁস করে কেউ পার পাবে না। কেউ এখানে হাত দেবেন না। হাত দিলে হাত পুড়ে যাবে, হাত ভেঙে দেব। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর আছে। হোমিওপ্যাথিক সিস্টেম চলবে না এবার, কঠোর ব্যবস্থা নেব।”

বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য ফেইসবুকে প্রশ্ন ফাঁসের প্রচারণা হয় দাবি করে নাহিদ বলেন, এতে অভিভাবকাও বিভ্রান্ত হন।

‘বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে’ কেউ যেন ‘ওই পথে’ না হাঁটেন- সে বিষয়েও তিনি হুঁশিয়ার করেন।

প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের বিভ্রান্ত না হওয়ারও অনুরোধ জানিয়ে শিক্ষার্থীদের মন দিয়ে পড়ালেখা করার আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী।

ফাইল ছবি

কোচিং সেন্টারগুলোর ওপর গত এক বছর ধরে নজরদারি করা হচ্ছে জানিয়ে নাহিদ বলেন, বৃহস্পতিবার থেকেই নতুন করে আরো বেশি নজরদারি করা হবে।

আগামী বছরের ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। এ জন্য বৃহস্পতিবার থেকেই প্রশ্ন মুদ্রণের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।

গত এইচএসসি পরীক্ষায় ঢাকা বোর্ডের ইংরেজি প্রশ্ন ফাঁসের পর প্রশ্ন ছাপানোর প্রক্রিয়ায় পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে জানালেও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টারের কোনো ধরনের তৎপরতা বরদাস্ত করা হবে না। প্রশ্ন ফাঁস করলে, প্রশ্ন ফাঁসের চেষ্টা করলে, প্রশ্ন নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ালেও কেউ রেহাই পাবে না, তাদের হাত ভেঙে দেব।”

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ প্রশ্ন প্রণয়ন ও বিতরণের সঙ্গে জড়িতরা এ সভায় তাদের মতামত তুলে ধরেন।

‘সাজেশন’ আকারে ফেইসবুকে প্রশ্ন তুলে দেওয়াকে ‘বেআইনি’ আখ্যায়িত করে নাহিদ বলেন, ‘এদের’ বিরুদ্ধেও আইনিভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আগামী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে শেষ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবের (প্রশাসন ও অর্থ) নেতৃত্বে ২৭ সদস্যের একটি কমিটিও করেছে সরকার।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গঠিত এই কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধিশাখা-১০ এর উপ-সচিবকে।

শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খান, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধি ছাড়াও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।