৫ বছর পর বন্দি দশা থেকে মা-ছেলে উদ্ধার

পাঁচ বছর ধরে ফেনী শহরের একটি ঘরে তালাবন্ধ এক নারী ও তার ছেলেকে উদ্ধার করা হয়েছে। সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের জের ধরে ওই নারীর এক ভাই তাদের বন্দি করে রেখেছিলেন বলে স্বজনরা জানিয়েছেন।

নাজমুল হক শামীম ফেনী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2014, 05:28 PM
Updated : 26 Nov 2014, 05:51 PM

উদ্ধার জাহানারা বেগম রোজী (৪৫) রাজধানীর ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক শিক্ষিকা। তার ছেলে মেহেদি ইসলাম জীমুনের বয়স এখন ১১ বছর।

পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, স্থানীয় একটি পত্রিকার প্রতিবেদন দেখে এই বাড়িতে অভিযান চালান তারা।

‘আমি পড়তে চাই, মুক্তি চাই’ লিখে জীমুন একটি চিরকুট বন্ধ ঘরের জানালা দিয়ে রাস্তায় ফেললে সেটি কুড়িয়ে পেয়ে এক ব্যক্তি ওই পত্রিকায় দেন বলে জানান তারা।

বুধবার সন্ধ্যায় ফেনী শহরের রামপুরে ওই বাড়ি থেকে উদ্ধারের পর মা ও ছেলেকে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

রোজী মানসিক সমস্যায় এবং জীমুন রিকেট রোগে আক্রান্ত হয়ে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটছে বলে হাসপাতালের আরএমও অসীম কুমার সাহা জানিয়েছেন।

দীর্ঘ পাঁচ বছর এক ঘরে বন্দী থাকায় রোজী সিজোফ্রেনিয়া আক্রান্ত হতে পারেন বলে ধারণা তার।

রোজীর ভগ্নিপতি নুরু ইসলাম জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগে স্নাতকোত্তর শেষ করে ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করতেন রোজী। একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা আবুল কালাম আজাদ ভূঞার সঙ্গে ২০০০ সালে তার বিয়ে হয়। তিন বছর সংসার জীবনের পর বিবাহ বিচ্ছেদ হয় তাদের। এরপর রোজী ফেনীতে গিয়ে বাবার বাড়িতে বসবাস শুরু করেন।

এক পর্যায়ে রোজী মানসিকভাবে কিছুটা ভেঙে পড়েন জানিয়ে নুরু বলেন, “এর মধ্যে ছোট ভাই শের শাহর সাথে সম্পত্তি নিয়ে তার বিরোধ দেখা দেয়। এরপর ২০০৯ সালের ডিসেম্বর মাসে রোজী ও তার ছেলে জীমুনকে ঘরে তালাবদ্ধ করে শের শাহ।”

শের শাহ ঢাকায় থাকেন বলে জানান তিনি।

নুরু বলেন, রোজীর অপর ভাই শাহেন শাহ মানসিক ভারসাম্যহীন। এক বোন মারা গেছেন। আর বড় ভাইয়ের ভয়ে অন্য চার বোনের কেউই রোজীর খোঁজ নিতে আসতেন না। তাদের তিনজন ঢাকায়, অপরজন ফেনী শহরেই বসবাস করেন। তিনি শহরের রামপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।

শহরের মধ্যে বিশাল বাড়িতে দুটি পাকা ঘরের একটিতে রোজী ও তার ছেলেকে আটকে রাখা হয়। অন্য ঘরের দুটি কক্ষ ভাড়া দেওয়া হয়। ভাড়ার চার হাজার টাকা দিয়ে  রোজী ও তার ছেলের খাবার-দাবার ও পোশাকের ব্যবস্থা হত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভাড়াটিয়া বলেন, “বাড়িওয়ালা শের শাহর কথা মতো তালাবদ্ধ ঘরের কক্ষের জানালা দিয়ে চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিতেন তারা।”

এভাবে যা আসত তাতে মা-ছেলের অর্ধাহারে-অনাহারে কোনরকম দিন কাটত। ভাড়াটিয়ারা না থাকলে  মাঝে মাঝে না খেয়েই থাকতে হত বলে জানিয়েছে জীমুন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তাদের ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস ঢোকার ব্যবস্থা নেই। ঘর থেকে উৎকট গন্ধ বের হচ্ছিল। ভিতরে একটি লাইট ও একটি ফ্যান রয়েছে।

তবে ফ্যানটি দীর্ঘদিন ধরে বিকল বলে জীমুন জানায়।

ছেলেটি বলে, “২০১০ থেকে ৫ বছর যাবত আমার মামা অন্যায়ভাবে আম্মুর সাথে আমাকে আটক রেখেছে। আমি পড়তে চাই, খেলতে চাই। আমি মুক্তি চাই।”

ফেনীর পুলিশ সুপার মো. রেজাউল হক জানান,  জীমুনের বাবা  কালাম বর্তমানে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় সমাজসেবা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন। মোবাইলে তাকে সব জানানো হয়েছে।

এ ঘটনায় জড়িতদের আইনের আওয়তায় আনার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।