‘গরিবের অর্থনীতিবিদের’ পুরস্কার উৎসর্গ ‘উদ্যমী গরিবদের’

দারিদ্র্য কমিয়ে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য গুসি পুরস্কার নিয়ে তা বাংলাদেশের ‘উদ্যমী দরিদ্রদের’ উৎসর্গ করেছেন গভর্নর আতিউর রহমান।

আবদুর রহিম হারমাছি ম্যানিলা থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2014, 01:27 PM
Updated : 26 Nov 2014, 05:50 PM

ফিলিপিন্সের ম্যানিলাভিত্তিক দাতব্য প্রতিষ্ঠান গুসি ফাউন্ডেশন সারা বিশ্বের ১৫ জন ব্যক্তির সঙ্গে বুধবার সম্মাননা জানায় বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকেও, যাকে তারা ‘গরিবের অর্থনীতিবিদ’ অভিহিত করেছেন। 

বিশ্বজুড়ে মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছেন এমন ব্যক্তিত্বদের ২০০২ সাল থেকে সম্মানিত করে আসছে গুসি ফাউন্ডেশন, যা ক্যাপ্টেন জেমেনিয়ানো জাভিয়ের গুসির নামে রাখা হয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে অংশ নেওয়া এই মানবাধিকারকর্মীর ছেলে ব্যারি এস গুসি বর্তমানে সংস্থাটির চেয়ারম্যান।

বুধবার ফিলিপিন্স ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আতিউর রহমানসহ এই বছর পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের হাতে সম্মাননাপত্র তুলে দেন ব্যারি এস গুসি। তার স্ত্রী ইভলিন গুসিও এসময় উপস্থিত ছিলেন।

পুরস্কারজয়ীদের নিজ নিজ দেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সন্ধ্যার এই অনুষ্ঠান। গরিব মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নে ‘যুদ্ধ’ করায় পদকজয়ীদের উদ্দেশে গান আর হলভর্তি প্রায় ৫ হাজার দর্শকের করতালিতে একে এক মঞ্চে ওঠেন তারা।

প্রত্যেক দেশের জাতীয় পতাকা হাতে পদকজয়ীদের মঞ্চে পৌঁছে দেওয়া হয়। এ সময় সবাই দাঁড়িয়ে সম্মান জানান তাদের।

প্রথমে মঞ্চে আসেন অষ্ট্রিয়ার পদকজয়ী হ্যান্স ক্লোচলার। তারপরই বাংলাদেশের আতিউর রহমান, লাল-সবুজ পতাকা সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে ওঠেন তিনি।

এরপর একে একে সবার হাতে পদক তুলে দেওয়া হয়। পদক হাতে নিয়ে সবাই সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

আতিউর রহমান বলেন, “প্রায় ছয় বছর আগে অর্ন্তভুক্তিমূলক ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গরিব মানুষকে আর্থিক সেবার মধ্যে নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিলাম আমি। আজ সেটা সফল হয়েছে।

“মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বিপ্লব ঘটেছে বাংলাদেশে। এই মোবাইল ব্যাংকিংসহ অন্যান্য ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে গরিব মানুষ তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটিয়েছে। আর এজন্যই আমার হাতে এই গুসি শান্তি পদক।”

নিজের কার্যক্রম এবং বাংলাদেশের অগ্রগতি তুলে ধরে ইংরেজিতে দেওয়া বক্তব্যের সমাপ্তি আতিউর রহমান টানেন মাতৃভাষা বাংলায়।

“এখানে বাংলাদেশের অনেকেই আছেন। তাদের জন্য আমি দুটি কথা বাংলায় বলছি....। আজ আমি, আমার এই পুরস্কার বাংলাদেশের পরিশ্রমী, উদ্যমী গরিব মানুষের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করছি। যাদের জন্য কাজ করতে গিয়েই আমার হাতে আজ এই পদক।”

আতিউর রহমান (ফাইল ছবি)

“একইসঙ্গে আমি এই পুরস্কার আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছিলেন সেই মুক্তিযোদ্ধাদের উৎসর্গ করছি।”

পদকজয়ীদের জন্য ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন। অনুষ্ঠানের ফাঁকে ফাঁকেই সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন চলে।

পদকজয়ীদের আনুষ্ঠানিক ফটোসেশনের পর শান্তির প্রতীক সাদা পায়রা উড়িয়ে পৃথিবীজুড়ে স্বাধীনতাকামী মানুষের জয়যাত্রা ঘোষণা করেন গুসি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ব্যারি এস গুসি।

বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরের সাফল্য উদযাপন করতে ম্যানিলা প্রবাসীদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রায় শ’খানেক প্রবাসী উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানে।

আতিউর রহমান গুসি শান্তি পুরস্কার পাওয়া দ্বিতীয় বাংলাদেশি। তার আগে দারিদ্র্য দূরীকরণ ও মানবিক কার্যক্রমের জন্য ২০১৩ সালে এই পুরস্কার পান ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন অব রুরাল পুওরের (ডরপ) মহাসচিব এএইচএম নোমান।

এবারের শান্তি পুরস্কার পাওয়াদের মধ্যে আতিউরের সঙ্গে রয়েছেন ভারতের কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডাস্ট্রিয়াল টেকনোলজির প্রতিষ্ঠাতা অচ্ছুত সামন্ত ও এবং চীনের হেনরি ফক ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক মনসন ফকসহ অস্ট্রেলিয়া, কঙ্গো, জার্মানি, ইরান, ইতালি, জাপান, লিথুনিয়া, নেপাল, নেদারল্যান্ডস, ফিলিপিন্স, পোল্যান্ড ও সৌদি আরবের ব্যক্তিরা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে আতিউর রহমানের এই পুরস্কার জয়।

কৃষক, পোশাক শ্রমিক, পথশিশু, ছাত্রদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক হিসাব খোলা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের প্রসার, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জামানত ছাড়াই ঋণ দিতে আতিউরের পদক্ষেপগুলো বিবেচনায় নিয়েছে গুসি ফাউন্ডেশন।

আতিউরের ভাষায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ‘মানবিক ব্যাংক’ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়ে সেই লক্ষ্য অর্জনে সাফল্যের দিকে এগোচ্ছেন তিনি।

গুসি শান্তি পুরস্কার নিতে রোববার ম্যানিলায় যান গভর্নর। সেখানে বাংলাদেশ দূতাবাস ইতোমধ্যে তাকে সংবর্ধনাও দিয়েছে।