মতপার্থক্য সরিয়ে যৌথ সমৃদ্ধির পথে আসুন: সার্ক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী

দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের জীবনে সত্যিকারের পরিবর্তন আনতে এবং সার্ককে গতিশীল করে এই জোটকে ‘জনগণের সার্ক’ এ রূপান্তরিত করতে সব মতপার্থক্য দূরে ঠেলে যৌথ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সুমন মাহবুব কাঠমান্ডু থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2014, 05:26 AM
Updated : 26 Nov 2014, 10:24 AM

আট দেশের এই জোটকে আরো গতিশীল করতে আরো বাস্তবসম্মত, ফলদায়ী ও পারস্পরিক অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সামষ্টিক লক্ষ্য নির্ধারণের ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।  

বুধবার সকালে কাঠমান্ডুর রাষ্ট্রীয় সভাগৃহে অষ্টাদশ সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সদস্য দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। 

জোটের বিদায়ী চেয়ারম্যান মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন আব্দুল গাইয়ুম কাঠমান্ডু সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করে রীতি অনুযায়ী এবারের স্বাগতিক দেশ নেপালের প্রধানমন্ত্রী সুশীল কৈরালার হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

এরপর জোটভুক্ত দেশগুলোর সরকারপ্রধানরা একে একে তাদের বক্তব্য তুলে ধরেন। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলের মানুষের মঙ্গলের জন্য অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার অঙ্গীকার নিয়ে তিন দশক আগে সার্কের সূচনা হয়েছিল। কিন্তু পেছনে ফিরে তাকালে মনে হতে পারে, প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার তুলনায় এ জোটের প্রাপ্তি অনেকটাই ম্লান।  

“তারপরও আমি আশাবাদী, আমাদের সামষ্টিক রাজনৈতিক ইচ্ছা ও আকাঙ্ক্ষা পূরণে সার্ক সক্ষম হবে।

“সব মতপার্থক্য দূরে ঠেলে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে এবং এ অঞ্চলের মানুষের সত্যিকারের অগ্রগতির জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। সার্ক ও এর কর্মকাণ্ডকে গতিশীল করতে এখন আমাদের বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা ও খোলাখুলি আলোচনা প্রয়োজন।”

 

অষ্টাদশ সার্ক সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য আরও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ’।  এ সম্মেলনে সার্ক আঞ্চলিক রেল সহযোগিতা, সার্ক পণ্য ও যাত্রীবাহী মোটরযান চলাচল এবং সার্ক বিদ্যুৎ সহযোগিতা চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও মূল সম্মেলনের আগে মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সদস্য দেশগুলোর মতপার্থক্য দূর হয়নি। 

সদস্য দেশের সরকার প্রধান ও পর্যবেক্ষকদের উপস্থিতিতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা বহুদিন হয় ‘জনগণের সার্ক’ এই ধারণা নিয়ে কথা বলছি। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতাও জনগণের চাহিদাকে সবার আগে স্থান দেওয়ার দাবি রাখে।”

আর এই বাস্তবতায় সার্ককে গতিশীল করতে সাতটি বিষয়ে সার্কের বাস্তবতা, বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

তার তুলে ধরা এই সাতটি ক্ষেত্র হলো- খাদ্য নিরাপত্তা,  তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়া, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলা, টেকসই প্রবৃদ্ধির স্বার্থে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ভারত মহাসাগরের বিপুল সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ এবং ভৌত যোগাযোগ বৃদ্ধি।

“যোগাযোগের বিষয়টিকে বাংলাদেশ বৃহৎ একটি প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করছে। ধারণা, জ্ঞান, প্রযুক্তি, সংস্কৃতি, মানুষ, সড়ক-রেল-আকাশ পথ, পণ্য পরিবহন, সেবা ও বিনিয়োগ- প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা যোগাযোগ স্থাপনে বিশ্বাসী।”

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্ক পণ্য ও যাত্রীবাহী মোটরযান চলাচল এবং আঞ্চলিক রেল নেটওয়ার্ক চুক্তি দ্রুত স্বাক্ষরিত হবে বলেই বাংলাদেশের প্রত্যাশা।

বিদ্যুৎ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে অগ্রগতিরও প্রশংসা করেন তিনি।

“আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে আমাদের ঐকমত্যের বিষয়গুলো এগিয়ে নিতে এই মিলনায়তনে উপস্থিত সার্ক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানাই আমি।

“সেইসঙ্গে আঞ্চলিক বাণিজ্য বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের আরো মনোযোগী হতে হবে। যতো দ্রুত সম্ভব এবং কার্যকরভাবে সাফটা চুক্তির বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে শুল্ক ও অশুল্ক বাধার বিষয়গুলোতে আমাদের নজর দিতে হবে। আমাদের জনগণ মাঠে কাজ দেখতে চায়। তারা প্রক্রিয়ায় নয়, ফলাফলে বিশ্বাসী।”