আবেদন অযোগ্য হয়েও ঢাবি শিক্ষক!

আবেদনের প্রাথমিক যোগ্যতা না থাকার পরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগে প্রভাষক পদে নিয়োগের জন্য মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন দুজন।

তপন কান্তি রায়বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2014, 04:21 PM
Updated : 26 Nov 2014, 05:07 PM

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ভালো ফল থাকায় আগের পরীক্ষার ফলের ক্ষেত্রে তাদের জন্য শর্ত শিথিল করা হয়েছে।

আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেছেন, মৌখিক পরীক্ষায় নির্বাচিত হলেও সিন্ডিকেটে আসলে যোগ্যতা খতিয়ে দেখে নিয়োগ আটকানোর সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া ওই বিভাগে দুইজন প্রভাষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তির বিপরীতে তিনজনকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়েছে।

গত ১২ জুন কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে উর্দু বিভাগে একজন স্থায়ী প্রভাষক ও একজন সহকারী অধ্যাপক পদের বিপরীতে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়।

এতে শর্ত হিসেবে বলা হয়, আবেদনকারীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এসএসসি ও এইচএসসিতে প্রথম বিভাগ অথবা জিপিএ ৪ দশমিক ২৫ এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে প্রথম বিভাগ অথবা সিজিপিএ ৩ দশমিক ২৫ থাকতে হবে।

তবে বিশেষ যোগ্যতা সম্পন্ন প্রার্থীদের ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিল করা যেতে পারে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, এই নিয়োগে প্রভাষক পদে ১৯ জন প্রার্থী আবেদন করেন।

গত ৬ই অগাস্ট তাদের মধ্যে ১১ জনকে মৌখিক পরীক্ষার জন্য অনুমোদন দেওয়া হলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখিত শর্ত পূরণ করে, এমন প্রার্থী ছিলে মাত্র পাঁচ জন।

পরবর্তীতে ৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত মৌখিক পরীক্ষায় তিনজন প্রার্থীকে নির্বাচন করা হয়, যাদের মধ্যে দুজনেরই এসএসসিতে প্রয়োজনীয় ৪ দশমিক ২৫ জিপিএ নেই।

এই দুই প্রার্থী হলেন- ছায়েবা জেরীন ও মো. মাসুম শেখ। এদের মধ্যে ছায়েবা জেরীন এই পদের নিয়োগের জন্য ২০১১ সালে মৌখিক পরীক্ষায় নির্বাচিত হলেও প্রস্তাবটি সিন্ডিকেটে যাওয়ার পর বাদ পড়েন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা দেওয়া দুই প্রার্থীরা কাগজপত্রে দেখা যায়, এসএসসিতে জেরীনের জিপিএ ৩ দশমিক ৬৩ এবং মাসুমের ৪।

তাদের সঙ্গে আবেদন করে মৌখিক পরীক্ষায় বাদ পড়াদের মধ্যে চারজন এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক ও স্নাতকত্তোর পর্যায়ে প্রথম বিভাগধারী। তাদের তিনজনই পিএইচডি গবেষক।

তাদের মধ্যে একজনের তিনটি প্রবন্ধ প্রকাশ ও ইউজিসির গবেষণা সহকারী হিসেবে এক বছর দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা এবং আরেকজনের একটি প্রবন্ধ প্রকাশ হয়েছে।

অপরদিকে এই বিভাগের সহকারী অধ্যাপকের পদটি বিভাগের একজন প্রভাষককে পদোন্নতি দিয়ে পূরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, এই পদটি বিভাগীয় প্রার্থীর মাধ্যমে পূরণ করা হলে দুইজন প্রভাষক নিয়োগের নির্দেশনা রয়েছে।

তবে ভাইভা বোর্ড তিনজন প্রার্থীকে নির্বাচিত করে তাদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য সিন্ডিকেটে প্রস্তাব পাঠানোর সুপারিশ করেছে।

পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট ভাইভা বোর্ডের সভাপতি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ। অন্যরা হলেন- কলা অনুষদের ডিন মো. আখতারুজ্জামান, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আব্দুল মা’বুদ, আরবী বিভাগের অধ্যাপক আ র ম আলী হায়দার এবং উর্দু বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান মুহাম্মদ গোলাম রাব্বানী।

মেধাবীদের মূল্যায়ন না করে ওই বিভাগের চেয়ারম্যানের মতাদর্শী ও দলীয় বিবেচনায় অযোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে বলে বাদ পড়াদের ওই চারজন অভিযোগ করেছেন।

এ বিষয়ে উর্দু বিভাগের চেয়ারম্যান সহযোগী অধ্যাপক মো. ইস্রাফীল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমার সময়ে এ নিয়োগ হয়নি। তাই এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান বলতে পারবেন।”

ওই ভাইভা বোর্ডের সদস্য উর্দু বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ গোলাম রাব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএনডি’র (কো-অর্ডিনেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) দেওয়া শর্ত অনুযায়ী যে পাঁচজনের শর্ত পূরণ হয়েছে শুধু তাদের ভাইভার কার্ড প্রদানের কথা বলেছিলাম। কিন্তু সেটি হয়নি।

“যাদের যোগ্যতা আছে তাদের নিয়োগের জন্য নির্বাচন করতে বলেছিলাম। কিন্তু ভাইভা কমিটির সদস্যরা ওই তিনজনকেই যোগ্য মনে করেছে।”

এ বিষয়ে উপউপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অনার্স-মাস্টার্সে অনেকের রেজাল্ট ভাল হয়, কিন্তু এসএসসি-এইচএসসিতে ততো ভালো হয় না। সেক্ষেত্রে তাদের বিষয়টি বিবেচনায় আনা হয়েছে। তারই ভিত্তিতে তাদের ভাইভা কার্ড প্রদান করা হয়েছে।”

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির শর্ত উপেক্ষা করে কীভাবে দুজনকে নিয়োগের জন্য নির্বাচন করা হল জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সিএনডির দেওয়া শর্ত পুনর্বিবেচনা করে তাদের নিয়োগের জন্য নির্বাচন করা হয়েছে।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিক বলেন, “শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রার্থীর যোগ্যতা আছে কি না সিন্ডিকেটে আসলেই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”