লতিফকে গ্রেপ্তারে স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন নেই

সংসদ সদস্যপদ থাকায় আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারে স্পিকারের অনুমতি প্রয়োজন বলে আলোচনা থাকলেও তার দরকার নেই বলে জানিয়েছেন শিরীন শারমিন চৌধুরী নিজেই।    

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2014, 11:39 AM
Updated : 24 Nov 2014, 12:26 PM

হজ নিয়ে মন্তব্যের জন্য মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগের সদস্যপদ হারানো লতিফ সিদ্দিকী কয়েকটি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে রোববার রাতে দেশে ফেরেন।

হেফাজতে ইসলামসহ কয়েকটি সংগঠনের দাবির মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার না করার পর সংসদ অধিবেশন চলাকালীন স্পিকারের অনুমতির বিষয়টি কয়েকটি গণমাধ্যমে আলোচনায় আসে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে স্পিকার শিরীন শারমিন সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সংসদ চত্বরের বাইরে থেকে কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে স্পিকারের অনুমতির প্রয়োজন নেই।

“সংসদ চত্বর থেকে কাউকে গ্রেপ্তার করতে হলে স্পিকারের অনুমতির বিষয়ে কার্যপ্রণালী বিধিতে সুস্পষ্ট বিধি রয়েছে। তবে সংসদ চলার সময় কোনো সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করার বিষয়ে আইনের বিধান রয়েছে, সেটি একজন সংসদ সদস্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।”

শিরীন শারমিন চৌধুরী

সংসদের কার্যপ্রণালী বিধিতে বলা আছে, “স্পিকারের অনুমতি ব্যতিরেকে সংসদের সীমার মধ্যে কাহাকেও গ্রেপ্তার করা হইবে না।”

সংসদ সীমার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সংসদ-কক্ষ, লবি, গ্যালারি এবং সাময়িকভাবে স্পিকার কর্তৃক নির্ধারিত স্থানসমূহ।

কার্যপ্রণালী আরো বলা হয়েছে, “কোনো সদস্য ফৌজদারি অভিযোগে বা অপরাধে গ্রেপ্তার হইলে কিংবা কোনো আদালত কর্তৃক কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইলে বা কোনো নির্বাহী আদেশক্রমে আটক হইলে ক্ষেত্রমত গ্রেপ্তারকারী বা দণ্ডদানকারী বা আটককারী কর্তৃপক্ষ বা জজ বা ম্যাজিস্ট্রেট বা নির্বাহী কর্তৃপক্ষ তৃতীয় তফসিলে প্রদত্ত যথাযথ ফরমে অনুরূপ গ্রেপ্তার, দণ্ডাজ্ঞা বা আটকের কারণ বর্ণনাপূর্বক অবিলম্বে অনুরূপ ঘটনা স্পিকারকে জানাইবেন।”

তবে ‘দ্যা ইস্ট পাকিস্তান অ্যাসেম্বলি মেম্বারস’ প্রিভিলেজেস অ্যাক্ট-১৯৬৫’ এ বলা হয়েছে, সংসদ অধিবেশন চলার সময় এবং অধিবেশন শুরুর সাতদিন আগে ও শেষের সাতদিন পরে কোনো সংসদ সদস্যের দেওয়ানি, ফৌজদারি এবং রাজস্ব আদালতে সশরীরে হাজির হওয়ার ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা নেই।

পাকিস্তান আমলে প্রণীত এই আইনটি এখনও কার্যকর বলে সংসদ সচিবালয়ের এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

এদিকে লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ‘আইনি জটিলতা’র কথা বলেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, তবে তা ব্যাখ্যা করেননি তিনি।

পরোয়ানার আসামি লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারে পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে কি না- সোমবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এই প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কোনো ব্যর্থতা নেই। গ্রেপ্তারে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে সত্য, তেমনি তিনি এখনও সংসদ সদস্য, এটাও সত্য।

“তাকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা আছে। এর বেশি কিছু আমি জানি না।”

মন্ত্রিত্ব হারানো লতিফ সিদ্দিকী দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও এখনও দশম সংসদের সদস্য রয়েছেন। দশম সংসদের চতুর্থ অধিবেশন বর্তমানে চলছে।  

আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী

লতিফ সিদ্দিকীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে আগামী বৃহস্পতিবার হরতালের ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। মঙ্গলবার হরতাল ডেকেছে শেখ শওকত হোসেন নীলু নেতৃত্বাধীন এনডিএফ জোটও।

গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে এক সভায় হজ নিয়ে বক্তব্যের জেরে মন্ত্রিত্ব ও আওয়ামী লীগের সদস্যপদ হারান লতিফ সিদ্দিকী।

ধর্ম অবমাননার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে কয়েক ডজন মামলাও হয়, এর মধ্যে কয়েকটিতে জারি হয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও।

তার মধ্যেই রোববার রাতে দেশে ফেরেন তিনি। তিনি কোথায় উঠেছেন, তা জানা যায়নি। আগাম জামিন নিতে সোমবার তিনি হাই কোর্টে যাবেন বলে গুঞ্জন ছড়ালেও তাকে আদালত প্রাঙ্গণে দেখা যায়নি।