দেড়মাস নিখোঁজ সিরাজগঞ্জের কলেজ ছাত্র

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার এক কলেজ ছাত্র নিখোঁজ হওয়ার দেড়মাস পরও উদ্ধার হয়নি।

ইসরাইল হোসেন বাবু সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Nov 2014, 11:36 AM
Updated : 24 Nov 2014, 11:36 AM

নিখোঁজ সালাউদ্দিন (১৮) উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের দেউলমুড়া গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে ও বগুড়ার শেরপুরের পল্লী উন্নয়ন ল্যাব স্কুল এন্ড কলেজের উচ্চমাধ্যমিক ১ম বর্ষের ছাত্র।

এ ঘটনায় স্বজনদের বিভ্রান্ত করা এবং তদন্ত কাজে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে।

নিখোঁজ ছাত্রের বড় ভাই ইসমাইল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ১১ অক্টোবর বিকালে বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর সালাউদ্দিন আর বাড়ি ফেরেননি। একই সময়ে পার্শ্ববর্তী চকনুর গ্রামের একটি মেয়েও (নাম প্রকাশ করা হলো না) বাড়ি ছিল না এবং দুজনেরই মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল।

“এ কারণে ধারনা করেছিলাম প্রেমের কারণে তারা পালিয়ে গেছে, কিন্তু তিনদিন পর মেয়েটি বাড়ি ফিরে এলেও সালাউদ্দিন ফেরেনি।”

এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে মেয়েটি প্রেমের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করে।

ইসমাইল হোসেন বলেন, “উপায়ান্তর না দেখে থানায় মামলা করতে যাওয়ার পথে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ছোট ভাইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে এমন আশ্বাস দিয়ে রাস্তা থেকে আমাদের ফিরিয়ে এনে তার বাড়িতেই বৈঠক হবে বলে জানান।”

কিন্ত সেখানে মেয়েপক্ষ হাজির নেই বলে জানিয়ে বৈঠক আর করা হয়নি।

তিনি জানান, এরপরও অনেক খোঁজাখুঁজি করে সন্ধান না পেয়ে গত ২৯ অক্টোবর তাদের বড় ভাই শাহজাহান আলী বাদী হয়ে কথিত ওই প্রেমিকা, মেয়েটির বাবা, ছোট ভাই, খালু ও এক বন্ধুকে আসামি করে আদালতে অপহরণ মামলা করেন।

রায়গঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান সোমবার দুপুরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মামলা হওয়ার পরদিন প্রেমিকা ও তার বন্ধু রাসেলকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের হেফাজতে (রিমান্ড) নেওয়ার আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়।

“কিন্তু রিমান্ড আবেদন শুনানির দিন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মামলায় সম্পৃক্ত না হয়েও আদালতে দাঁড়িয়ে আসামিদের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়ায় আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করেননি।

“এর ১০ দিন পর গ্রেপ্তাররা জামিনে মুক্ত হন, যে কারণে তাদের কাছ থেকে কোন তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি।”

তবে, নিখোঁজ ছাত্রকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। পাশাপাশি ইউপি চেয়ারম্যানের রহস্যজনক ভূমিকার বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে এসআই মোস্তাফিজুর জানান।

পাঙ্গাসী ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “৮নং ইউপি সদস্য মহা আলম ছেলেটির সন্ধান পাওয়া গেছে জানানোর কারণে পরিবারের লোকজনকে থানায় মামলা করতে নিষেধ করেছিলাম। কিন্ত ইউপি সদস্য পরে ওই ছেলের সন্ধান দিতে পারেননি।”

তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে ৩টি পরিবারের মধ্যে অশান্তি বিরাজ করায় আদালতে দাঁড়িয়ে বলেছি, মামলাটি সন্দেহের বশে করা হয়েছে। মনে হয় পরিবারের সাথে রাগারাগি করে ছেলেটি নিখোঁজ হয়েছে।”

কিন্তু ইউপি সদস্য মহা আলম চ্যেয়ারম্যান সালামের বক্তব্য মিথ্যা বলে দাবি করেন।

মহা আলম জানান, “নিখোঁজ ছেলেটি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের নিকট আত্বীয়। আর মেয়েটির পরিবারের সঙ্গে বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের ভালো সর্ম্পক। সাবেক ও বর্তমান চেয়ারম্যানের মধ্যে নির্বাচনী দ্বন্দ্ব রয়েছে, যে কারণে ছেলেটি নিখোঁজের পর আসমিদের বাঁচানোর জন্য চেয়ারম্যান থানায় মামলা করতে বাধা দেন।

“ছেলেটির সন্ধান পাওয়া গেছে এমন কথা আমি চেয়ারম্যানকে বলিনি, তিনি মিথ্যা কথা বলেছেন।”

নিখোঁজ সালাউদ্দিনকে উদ্ধারে রায়গঞ্জ থানার পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ গোয়েন্দা পুলিশও তদন্ত শুরু করেছে।

গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক বেনু রায় জানান, “পুলিশ সুপারের নির্দেশে কলেজ ছাত্রকে উদ্ধারে মামলাটির তদন্ত করছি। মোবাইল কল লিস্টের সূত্র ধরে রংপুর থেকে সম্প্রতি একজনকে আটক করা হয়। কিন্ত তার ব্যবহৃত মোবাইলের আইএমই নম্বর ও আরেকটি মোবাইলের আইএমই নম্বর একই হওয়ায় আটককৃত ব্যক্তি ঘটনার সাথে জড়িত কি না সন্দেহ দেখা দিয়েছে।”

তবে উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান তিনি।