ক্ষতিপূরণের জন্য এখনও ঘুরছেন তাজরীনের শ্রমিকরা

তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ক্ষতিপূরণের জন্য ঘুরছেন ওই ঘটনায় হতাহত শ্রমিকদের স্বজনরা।

সালাহউদ্দিন ওয়াহিদ প্রীতমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2014, 07:11 PM
Updated : 23 Nov 2014, 07:11 PM

তবে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই কারখানার অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তদের যারাই বিজিএমইএর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তারা সবাই ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন।

শনিবার সাভারে নিশ্চিন্তপুর এলাকায় বসবাসকারী তাজরীন ফ্যাশনসের বেশ কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের।

তাজরীন ফ্যাশনস এর অগ্নিকাণ্ডের পর নিখোঁজ শ্রমিক আসমার বাবা মধু মিয়া ক্ষতিপূরণের আশায় দুবছর ধরে বিভিন্ন জায়গায় ধর্না দিয়ে বেড়াচ্ছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দুই বছর ধরে অনেক জায়গায় গিয়েছি। অনেককে ধরাধরি করেছি, কিন্তু একটা টাকাও পাইনি।”

২০১২ সালের ২৪ নভেম্বর সাভারের নিশ্চিন্তপুরে তোবা গ্রুপের কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসের ওই অগ্নিকাণ্ডে সরকারি হিসেবে অনুযায়ী ১১২ জন গার্মেন্টকর্মী নিহত হন। আগুন থেকে বাঁচতে ওই ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর থেকে ঝাঁপ দিয়ে আহত হন দেড় শতাধিক গার্মেন্টকর্মী।

এমনি এক আহত শ্রমিক রূপা সেদিন কারখানার চতুর্থ তলায় কাজ করছিলেন। আগুন লাগার পর জানালা দিয়ে লাফ দেন তিনি।

রূপার মা আনজু বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পড়ে গিয়ে রূপা কোমর, পা ও মাথায় আঘাত পায়। পা ও কোমরের আঘাত সেরে উঠলেও অর্থের অভাবে মাথার আঘাতের চিকিৎসা করাতে পারেননি তিনি।

“মাঝে মাঝেই রূপার মাথা ব্যথা করে।  তখন সে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে এবং চোখে কিছু দেখতে পায় না।”

আনজু জানান, গত দুই বছরে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করেও তারা কোনো ক্ষতিপূরণ পাননি।

একই অবস্থা লাইলী, সুলতানা এবং রেশমারও। এরা তিনজনই অপারেটর হিসেবে তাজরীন ফ্যাশনস কাজ করতেন।

এবিষয়ে গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের নেতা শহীদুল ইসলাম সবুজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকের সংখ্যা ১১২ জন। এর মধ্যে সর্বশেষ খবর পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ১০৯ জন। আহত শ্রমিকের সংখ্যা দেড় শতাধিকেরও বেশি। তাদের মধ্যে আমাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন ৯৪ জন।

বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব লেবার স্টাডিজ(বিলস) থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ১৯৯০ সাল থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ১৫টি গার্মেন্ট কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে তাজরীন ফ্যাশনসে হতাহতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

তাজরীন ফ্যাশনসের ক্ষতিগ্রস্ত সব শ্রমিক যে ক্ষতিপূরণ পাননি তা তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট আতিকুল ইসলামও স্বীকার করেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের জন্য আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি এবং এখনো করে যাচ্ছি। যারা যারা আমাদের কাছে এসেছে তাদের প্রত্যেকেকেই বিজিএমইএর পক্ষ থেকে এককালীন অর্থ, চিকিৎসা ব্যয় ও অন্যান্য ফ্যাক্টরিতে চাকরির ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”

এখনো ক্ষতিগ্রস্ত অনেক শ্রমিকের ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “যারা ক্ষতিপূরণ পান নি তারা সম্ভবত আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে অবশ্যই আমরা বিবেচনা করব।”