রোববার রাজধানীর ছায়ানট ভবনে নারী ও শিশু নির্যাতন বিষয়ক এক গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘প্রান্তিকীকরণ এবং বিচারহীনতা: পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী ও কন্যাশিশুর বিরুদ্ধে সহিংসতা’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক চঞ্চনা চাকমা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “পার্বত্য চট্টগ্রামে যৌন নির্যাতন বৃদ্ধির মূল কারণ হল বিচারহীনতা। প্রশাসন, রাজনীতিক ও বিচার ব্যবস্থার পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে আদিবাসী ও সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। থানা ও প্রশাসনের অন্যান্য অফিসগুলোতে স্থানীয় রাজনীতিকদের প্রভাব এবং বিপরীতে আদিবাসীদের দুর্বল অর্থনীতিক অবস্থাও যৌন সহিংসতার জন্য দায়ী।”
পার্বত্য অঞ্চলের বৈষম্য দূর করতে এবং সেখানকার নাগরিক সমস্যার সমাধানে অবিলম্বে পার্বত্য শান্তিচুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান অধ্যাপক মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, “একটি উদাহরণ উপলব্ধি করা প্রয়োজন, সেটি হল- সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড়। আমাদের এক ফোঁড় থাকতে থাকতে সুযোগ বেছে নিতে হবে। তাই সরকারের প্রতি অনুরোধ, দ্রুত সময়ের মধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করুন । নয়তো এর জন্য ভুগতে হবে।”
শুধু একটি অঞ্চলের মানুষের শান্তির জন্য নয়, বরং পুরো দেশের শান্তি ও নিরাপত্তার স্বার্থে পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির বাস্তবায়ন করা দরকার মন্তব্য করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “আর তা না হলে নতুন করে পার্বত্য চট্টগ্রামে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দেখা দিতে পারে।”
নারী নেত্রী খুশি কবির বলেন, “ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতিহারে আদিবাসীদের স্বীকৃতি দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। তারপরেও কেন এই ঘোষণা বাস্তবায়ন নিয়ে টালবাহানা হচ্ছে সেটি আমাদের বোধগম্য নয়।”
আদিবাসীরা মৌলিক অধিকার পায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আইনজীবী সারা হোসেন বলেন, “বিভিন্ন সময়ে আদিবাসীদের মামলাগুলোর ক্ষেত্রে মূলধারার নারী সংগঠনগুলোর সমর্থন থাকলেও পরে সেটি আর অব্যাহত থাকে না। ফলে মামলা দুর্বল হয়ে যায়। এছাড়া ভুক্তভোগীদের বিরুদ্ধে অপরাধীদের হুমকি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর নির্লিপ্ততার কারণে অনেক অন্যায়ের শাস্তি নিশ্চিত করা যায় না।”
পার্বত্য চট্টগ্রাম কমিশনের উপদেষ্টা মেঘনা গুহ ঠাকুরতার সঞ্চালনায় নারী নেত্রী সুস্মিতা চাকমা, শেফালিকা ত্রিপুরা, রীতা চাকমাসহ অন্যান্যরা অনুষ্ঠানে মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন।
গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থাপিত প্রতিবেদনে শান্তিচুক্তি অনুসারে পার্বত্য অঞ্চল থেকে সেনাবাহিনী প্রত্যাহার এবং সেখানে বাঙালিদের অভিবাসন সম্পূর্ণ বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়।
এছাড়া ‘বেআইনিভাবে আদিবাসীদের ভূমি দখল করে অবস্থান নেওয়াদের’ দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা এবং পাহাড়িদের দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূর করতে প্রয়োজনীয় উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়।