মোবারকের ৫ ‘যুদ্ধাপরাধ’

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বহিষ্কৃত আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক হোসেনের বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ  ও লুটতরাজের মতো পাঁচ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

কাজী শাহরিন হকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2014, 01:36 PM
Updated : 23 Nov 2014, 01:36 PM

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ সোমবার এ মামলার রায় ঘোষণার দিন রেখেছে।

প্রসিকিউশন বলছে, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার আখাউড়ার নয়াদিল গ্রামের মোবারক একাত্তরে স্থানীয় রাজাকার বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসনের তৈরি রাজাকারের তালিকায়ও তার নাম রয়েছে।

একাত্তর পরবর্তী সময়ে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি করলেও পরে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগ দেন এবং এক পর্যায়ে আখাউড়ার মোগড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হন। দুই বছর আগে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।

অভিযোগ ১: ১৯৭১ সালের ২২ অগাস্ট আখাউড়ার টানমাণ্ডাইল গ্রামের হাজী নূর বক্সের বাড়িতে ১৩০/১৩২ জন গ্রামবাসীকে জড়ো করেন মোবারক ও তার রাজাকার সহযোগীরা। পরে তাদের আটক করে নৌকায় করে গঙ্গাসাগর দীঘির পাড়ে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের খোঁজে সেখানে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন করা হয়। এরপর ৩৩ জনকে বাছাই করে আটকে রাখা হয় তেরজুড়ি হাজতখানায়। পরদিন ২৩ অগাস্ট পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নিয়ে ওই ৩৩ জনকে দীঘির পাড়ে পানিতে দাঁড় করিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় মোবারকের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের  ৩(২)(এ)(জি), ২০(২) এবং ৪(১) ধারায় অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ ২: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় হিন্দু মন্দির ‘আনন্দময়ী কালীবাড়ী’ দখল করে ‘রাজাকার মঞ্জিল’ নামকরণ করে মোবারক ও তার সহযোগী রাজাকাররা। তারা মন্দিরের সব ধনসম্পদও লুট করে। ২৪ অক্টোবর শিমরাইল গ্রামের উমেশ চন্দ্র দেবের ছেলে কলেজ ছাত্র আশুরঞ্জনকে ধরে এনে সেখানে চার দিন আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়। তাকে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ বলতে বলা হলে সে ‘জয় বাংলা’ বলে। এরপর তাকে কুরুলিয়া খালে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ), ২০(২) এবং ৪(১) ধারায় লুটপাট, অপহরণ, নির্যাতন ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

ফাইল ছবি

 

অভিযোগ ৩: মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া থানার ছাতিয়ান গ্রাম থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতাকারী আব্দুল খালেককে অপহরণ করে মোবারক ও তার সহযোগী রাজাকাররা। তাকে সুহিলপুর রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়, যার প্রত্যক্ষদর্শী তার ছেলে রফিকুল ইসলাম। একই রাতে তাকে তিতাস নদীর পশ্চিম দিকে অবস্থিত বাকাইল ঘাটে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলি করার পরে মোবারক বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খালেকের মৃত্যু নিশ্চিত করেন।

এ ঘটনায় মোবারকের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের  ৩(২)(এ), ২০(২) এবং ৪(১) ধারায় অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যাসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ ৪: একাত্তরের ২৪/২৫ নভেম্বর দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার খড়মপুর গ্রাম থেকে খাদেম হোসেন খানকে অপহরণ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে বসানো পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে নিয়ে যায় মোবারক ও তার সহযোগী রাজাকাররা। সেখানে তাকে পা বেঁধে উল্টো করে ঝুলিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেল হাজতে নিয়ে আটকে রাখা হয়।

এ ঘটনায় আসামির বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের ৩(২)(এ), ২০(২) এবং ৪(১) ধারায় অপহরণ, আটক ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

অভিযোগ ৫: ওই বছর ২৮/২৯ নভেম্বর সকালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার খড়মপুর গ্রামের আব্দুল মালেক এবং আমিনপাড়ার মো. সিরাজকে তাদের বাড়ি থেকে অপহরণ করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। পরে তাকে আটকে রাখা হয় স্থানীয় জেলখানায়। ৬ ডিসেম্বর সিরাজসহ আরো কয়েকজনকে কুরুলিয়া খালে নিয়ে গুলি করে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় মোবারকের বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনাল আইনের  ৩(২)(এ), ২০(২) এবং ৪(১) ধারায় অপহরণ, আটকে রেখে নির্যাতন ও হত্যাসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।

এই পাঁচ ঘটনায় অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ২৩ এপ্রিল মোবারকের বিচার শুরু হয়। সাক্ষ্য ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ট্রাইব্যুনাল গত ২ জুন মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে।