আটক ৬: র‌্যাবের দাবি এরাই শফিউলের ‘হত্যাকারী’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক একেএম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যা মামলায় আরো ছয়জনকে আটক করে র‌্যাব বলেছে, এরাই হত্যাকাণ্ডের ‘মূল পরিকল্পনাকারী এবং হত্যাকারী’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকও রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2014, 12:35 PM
Updated : 23 Nov 2014, 03:26 PM

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান বিডিনিউজকে টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, শনিবার রাতভর অভিযান চালিয়ে ঢাকা ও রাজশাহীর বিভিন্ন স্থান থেকে এই ছয়জনকে আটক করা হয়।

এরা হলেন- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহ সভাপতি আবদুস সামাদ পিন্টু (৩৪), কাটাখালী পৌর যুবদলের নেতা আরিফুল ইসলাম মানিক (৩৩), ব্যাটারিচালিত রিকশাচালক ইব্রাহিম খলিল ওরফে টোকাই বাবু (২১), মুদি দোকানদার সিরাজুল ইসলাম ওরফে কালু (২২), বেকার যুবক আল মামুন (৩১) ও মো. সবুজ শেখ (১৮)।

তাদের র‌্যাব সদর দপ্তরে সংবাদ সম্মেলনে হাজির করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান।

তিনি বলেন, “পিন্টুর স্ত্রী নাসরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার সেকশন অফিসার। সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শফিউল তার সঙ্গে ‘অসৌজন্যমূলক আচরণ’ করেন এবং এর জের ধরে তাকে হত্যা করার কথা গ্রেপ্তাররা স্বীকার করেছেন।” 

শফিউল হত্যাকাণ্ডের তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ‘জামায়াত নিয়ন্ত্রিত’ জঙ্গি সংগঠনের জড়িত থাকার কথা বললেও তেমন কোনো প্রমাণ পাননি বলে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান মুফতি মাহমুদ।

তিনি বলেন, অধ্যাপক শফিউলের বাসা থেকে তার যে ছাত্রীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে, তারও কোনো সংশ্লিষ্টতা এ ঘটনায় পাওয়া যায়নি। 

র‌্যাবের ভাষ্য অনুযায়ী, এই হত্যা পরিকল্পনায় জেলা যুবদলের আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল ও জামাই বাবু নামে আরো দুজন জড়িত। উজ্জ্বল ও পিন্টু পরামর্শ করে অধ্যাপক শফিউলের ওপর হামলার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী পরিকল্পনা সাজিয়ে বাকিদের নিয়ে হামলায় নেতৃত্ব দেন মানিক। আর শফিউলের মাথায় কোপ দেন সবুজ।      

গত ১৫ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাইয় এলাকায় লালনভক্ত শফিউলকে হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে মামলা করেছে তাতে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডেও নিয়েছে পুলিশ।

তাদের দ্বিতীয় দফা রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিহার থানার ওসি আলমগীর হোসেন গত শুক্রবার আদালতকে বলেন, শফিউল হত্যায় ‘জামায়াত নিয়ন্ত্রিত’ জঙ্গি সংগঠনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছেন তারা।

ওই ১১ আসামির সবাই জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত বলেও আদালতকে জানান তিনি।

অধ্যাপক শফিউল ইসলাম

নিহত শিক্ষকের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছেলে সৌমিন শাহরিদ জেভিন তার বাবার হত্যায় ইসলামী জঙ্গি সংগঠনগুলোর জড়িত থাকার সন্দেহের কথা বলেছিলেন এবং আনসার আল ইসলাম বাংলাদেশ-২ নামে একটি ফেইসবুক পৃষ্ঠায় হত্যার দায় স্বীকারও করা হয়েছিল।

তবে র‌্যাবের মুফতি মাহমুদ বলছেন, শফিউল হত্যাকাণ্ডে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার কোনো তথ্যপ্রমাণ তারা পাননি। 

তিনি বলেন, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার ১১ জনের মধ্যে তিনজন হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানতে পেরেছেন।

মতিহার থানার ওসি জানান, আরিফুল ইসলাম মানিক রাজশাহীর কাটাখালি এলাকার সন্ত্রাসী দল ‘মানিক বাহিনীর’নেতা।  তিনি চোরাচালান, বালুমহাল ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণে বিএনপি নেতাদের ভাড়াটিয়া হিসাবে কাজ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।

এই যুবদল নেতার বিরুদ্ধে মতিহার থানায় হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১৭টি মামলা রয়েছে। কয়েকবার গ্রেপ্তার হলেও কিছুদিন আগে উচ্চ আদালতের থেকে জামিনে তিনি বেরিয়ে আসেন।

মানিকের বড় ভাই আব্বাস এক সময় মহানগর যুবলীগের সহসভাপতি থাকলেও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়ানোয় ২০০৯ সালে তাকে বহিষ্কার করা হয়।

জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক জামিলুর রহমান জামিল জানান, চলতি বছর মার্চে কাটাখালি পৌরসভা যুবদলের সম্মেলনের পর মানিককে সভাপতি করে একটি কমিটি প্রস্তাব করেন জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল ইসলাম উজ্জ্বল। কিন্তু সেই কমিটি আর অনুমোদন পায়নি।

তিনি জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রদল নেতা পিন্টু  ও উজ্জ্বল ব্যবসায়িক অংশীদার। পিন্টুর বাড়ি নগরীর ডাসমারিতে, উজ্জ্বলের বাড়ি কাজলা এলাকায়।

“হোসেন ইন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্সে তারা দুজন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কাজ করতেন। তারা চোরাচালান, বালু মহাল ও ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ করতেন মানিকের মাধ্যমে।”