খালাস চেয়ে নিজামীর আপিল

একাত্তরের আলবদর প্রধান ও জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী যুদ্ধাপরাধ মামলায় খালাস চেয়ে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেছেন।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2014, 08:09 AM
Updated : 23 Nov 2014, 09:32 AM

নিজামীর পক্ষে তার আইনজীবী জয়নাল আবেদীন (অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড) রোববার সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই আবেদন দাখিল করেন।

জামায়াত আমিরের আরেক আইনজীবী শিশির মো. মনির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ১২১ পৃষ্ঠার আপিল আবেদনের সঙ্গে ৬ হাজার ২৫২ পৃষ্ঠার নথিপত্র দাখিল করেছেন তারা। 

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ট্রাইব্যুনাল নিজামীর সর্বোচ্চ সাজার যে রায় দিয়েছে, তাতে তারা সন্তুষ্ট। তারা আসামির আপিলের বিপক্ষে যুক্তিতর্কে অংশ নেবেন।   

গত ২৯ অক্টোবর ওই রায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসির রজ্জুতে ঝুলিয়ে নিজামীর দণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেন।

তিনি বলেন, “আদালত সম্মত হয়েছে যে, তিনি যে মাত্রায় হত্যা, গণহত্যা ঘটিয়েছেন, তাতে সর্বোচ্চ সাজা না দিলে তা হবে ন্যায়বিচারের ব্যর্থতা।” 

জামায়াতের আমির নিজামী একাত্তরে ছিলেন জামায়াতেরই ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নাজিমে আলা বা সভাপতি এবং সেই সূত্রে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত আলবদর বাহিনীর প্রধান।

স্বাধীনতাকামী বাঙালির ওপর দমন-পীড়ন চালাতে পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য গঠিত রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটিতেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে মামলার রায়ে উঠে এসেছে।

বাঙালি জাতিকে সমূলে ধ্বংস করতে ‘স্বেচ্ছায় ও সচেতনভাবে’ নিজামী পবিত্র ধর্ম ইসলামের অপব্যবহার করেন বলেও রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়।

নিজামীর মানবতাবিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগের মধ্যে বুদ্ধিজীবী গণহত্যা, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, সম্পত্তি ধ্বংস, দেশত্যাগে বাধ্য করা, আটক, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র ও সংঘটনে সহযোগিতার আটটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়।

এর মধ্যে বুদ্ধিজীবী গণহত্যাসহ চার অভিযোগের প্রত্যেকটিতে তাকে সর্বোচ্চ সাজা দেয় ট্রাইব্যুনাল। বাকি চারটি অভিযোগে নিজামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং আট অভিযোগে তাকে খালাস দেওয়া হয়। 

৭১ বছর বয়সী নিজামী বিগত চার দলীয় জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী ছিলেন। তার আগে ২০০১-০৩ সময়ে ছিলেন কৃষিমন্ত্রী।

এর আগে চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলাতেও তার মৃত্যুদণ্ডের আদেশ হয়।

বাংলাদেশে স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এমন একজন ব্যক্তিকে প্রজাতন্ত্রের মন্ত্রী নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ ও সম্ভ্রম হারানো দুই লাখ নারীর প্রতি ‘চপেটাঘাত’ ছিল বলেও ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়।