বাগেরহাটে পূরার্কীতি ধ্বংসের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৬

বাগেরহাটে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংরক্ষিত পূরাকীর্তি বড় আজিনা মসজিদের ঢিবি ধ্বংস করে সেখানে বসতবাড়ি নির্মাণের অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বাগেরহাট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2014, 05:50 PM
Updated : 22 Nov 2014, 05:50 PM

শনিবার দুপুরে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে শহরের খারদ্বার এলাকায় খনন কাজ চলা অবস্থায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- বাগেরহাট শহরের খারদ্বার এলাকার মনিরুজ্জামান মোল্লার ছেলে বুলবুল মোল্লা (৩৪), শ্রমিক জনি (২২), রুবেল শেখ (২৫), নাসির শেখ (২৫), বাচ্চু শেখ (৪৫) ও জিহাদুল খান (২২)। এদের বাড়ি বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের বিজয়পুর গ্রামে।

বিকেলে আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় বাগেরহাট মডেল থানার এসআই বিপ্লব হোসেন বাদী হয়ে ওই জায়গার মালিক দাবিদার বুলবুল মোল্লাসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছেন।

শনিবার বিকেলে বাগেরহাট শহরের সোনাতলা মৌজায় অবস্থিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে বুলবুল মোল্লার নির্দেশে পাঁচ শ্রমিক ঢিবি থেকে মাটি কেটে সরিয়ে নিয়েছেন। ঢিবির দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আনুমাণিক ত্রিশ বর্গফুট এলাকা আড়াই থেকে তিন ফুট গভীর করে মাটি কেটে সমান করা হয়েছে। ওই এলাকা থেকে প্রচুর পরিমাণ প্রাচীন ইট অপসারণ করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কেটে নেওয়া মাটি দিয়ে পাশের কিছু নীচু এলাকা ভরাট করা হচ্ছে। ওই জায়গার সামান্য উত্তর দিকে ঢিবির মধ্যভাগে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের একটি সতর্কীকরণ নোটিশবোর্ডও রয়েছে।

শ্রমিকরা স্থাপনার ভগ্নাবশেষের পূর্ব দিকের একটি থামের (পিলার) নীচের দিকের দুটি চৌকোনা পাথর তুলে ফেলেন। প্রায় দুই ফুট দৈর্ঘ্যের বর্গাকৃতি এই বেলে পাথর দুটির উচ্চতা প্রায় ছয় ইঞ্চি। পাথর দুটি চুন-সুড়কির আস্তর ও লোহার খিলান দিয়ে পরস্পর সংযুক্ত ছিল।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বাগেরহাটের কাস্টডিয়ান মো. গোলাম ফেরদৌস বলেন, হযরত খান জাহানের সমসাময়িক এই ‘বড় আজিনা’ ধ্বংসাবশেষ সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংরক্ষিত প্রত্নতত্ত্ব হিসেবে গেজেটভুক্ত। গেজেট অনুযায়ী ‘বড় আজিনা প্রত্নতাত্তিক ঢিবি’র অবস্থান খানজাহানের বসতভিটা থেকে প্রায় চার কি.মি দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বর্তমান বাগেরহাট শহরের সোনাতলা মৌজায়।

সংরক্ষিত জমির পরিমাণ দুই দশমিক ৯০ একর যা জনৈক দ্বীন মোহম্মদ মোল্লাসহ কয়েকজনের দখলে রয়েছে। পরে ওই এলাকা চি‎হ্নিত করে নোটিশ টানানো হলেও বুলবুল মোল্লা সেখানে নতুন ভবন তোলার কাজ শুরু করেছেন।

‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য খলিফতাবাদ থেকে বাগেরহাট’ শিরোনামে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক ২০০৩ সালে প্রকাশিত একটি বইতে এই ‘বড় আজিনা’কে হযরত খানজাহানের সময়কালের একটি মুসাফিরখানা বা কাটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে ৩৭ মিটার দৈর্ঘ্য ও ২৯ মিটার প্রস্থের ১৮টি স্তম্ভবিশিষ্ট একটি স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত পাঁচটি স্তম্ভের উলম্ব প্রস্তর সারির প্রথম অংশটি এখনও মাটির উপরে দণ্ডায়মান।

তবে উত্তরাধিকার সূত্রে জমির মালিকানা দাবি করে বুলবুল মোল্লা বলেন, “বাপ দাদারা বসবাস করে গেছেন আমরাও বসবাস করছি। তাই আমি এখানে থাকার জন্য পাকা ঘর তুলছি।”

বাগেরাহট মডেল থানার ওসি মো. আলী আজম খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ সেখানে গিয়ে বুলবুল মোল্লা ও পাঁচ শ্রমিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

“তারা সরকার ঘোষিত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ধ্বংস করার অভিযোগে খনন কাজ করা অবস্থায় তাদের হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।”

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১৯৬৮ সালের প্রত্নতত্ত্ব সংরক্ষণ আইনে ১৯ (১), ১৯ (২) ধারা এবং ৪৪৭,৩৭৯ ও ৪২৭ দণ্ডবিধি অনুযায়ী একটি মামলা করেছে বলে জানান।