আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
শুক্রবার ঢাকা সেনানিবাসে সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থান অধিকার করেছে। শান্তিরক্ষা পালনকালে অনেক সদস্য শাহাদাৎ বরণ করেছেন, আমি তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।”
একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সশস্ত্র বাহিনীর সক্ষমতা অর্জনে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সেই পরিকল্পনা নিয়েই সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীকে দেশ ও বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি এবং আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম দিয়ে সজ্জিত করছি।”
সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে নতুন অস্ত্রশস্ত্র সংযুক্তির কথা উল্লেখ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলেও এই বাহিনীর একটি ডিভিশন করার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“বাংলাদেশ নৌ বাহিনীকে একটি আধুনিক শক্তিশালী ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। আমাদের সরকারের গত মেয়াদে নৌবাহিনীকে মিলিটারি পেট্রোল এয়ারক্রাফট ও হেলিকপ্টার সংযোজন করেছি।
একটি সুশৃঙ্খল, সুসজ্জিত, দক্ষ ও আধুনিক সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সব কিছু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ‘ভাস্বর’ সশস্ত্র বাহিনীকে ‘জাতীয় অহঙ্কার’ আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা তিন বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনারা শৃঙ্খলা ও পেশাগত দক্ষতা বজায় রেখে দেশ গড়ার কাজে আরো অবদান রাখুন।”
শুক্রবার বিকালে সেনাকুঞ্জে এই অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজসহ উচ্চ আদালতের বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, রাজনীতিবিদ, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসকসহ উর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সেনাকুঞ্জের অনুষ্ঠানে গেলেও বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ যাননি।
প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেন, “দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলাসহ অভ্যন্তরীণ সঙ্কট নিরসনে দেশপ্রেমের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।”
অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সশস্ত্র বাহিনীর অংশগ্রহণের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জাতি গঠনমূলক ও আর্থসামাজিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে চলেছে।”
আন্তর্জাতিক শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“জাতিসংঘে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশ শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে।”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার জাহাইজ্জ্যার চর এলাকার সব খাসজমি পরিকল্পিতভাবে বনায়নের জন্য সেনাবাহিনীর অনুকূলে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ক্যারিং চর প্রদানের বিষয়টি পরীক্ষাধীন রয়েছে, যা প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহার করা হবে।”
বিমান বাহিনীর সাংগঠনিক উন্নয়ন এবং পেশাগত নৈপণ্য বৃদ্ধির জন্য বিমান ও প্রয়োজনীয় যুদ্ধোপকরণ সংযোজনের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকার কথাও বলেন প্রধানমন্ত্রী।
“উদ্ধার ও নিরাপত্তা পরিচালনার জন্য দুটি মেরিটাইম সার্চ এন্ড রেসকিউ অত্যাধুনিক অড-১৩৯ হেলিকপ্টার এবং ট্রান্সপোর্ট প্রশিক্ষণ বিমান অতিশীঘ্রই বিমান বাহিনীতে সংযুক্ত হবে।”
সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আবাসন সমস্যা সমাধানের জন্য বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলমান থাকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জলসিঁড়িতে প্লট বরাদ্দ অচীরেই শুরু হবে।”
পরে প্রধানমন্ত্রী ঘুরে ঘুরে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।