শিশু সুরক্ষায় পৃথক অধিদপ্তরের দাবি

শিশু অধিকার সুরক্ষায় পৃথক অধিদপ্তর ও ন্যায়পাল প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছে শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা উন্নয়ন সংগঠনগুলোর জোট চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন ইন বাংলাদেশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2014, 05:37 PM
Updated : 20 Nov 2014, 05:37 PM

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের রজতজয়ন্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিয়াম মিলনায়তনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ দাবি জানায় তারা।

পর্যবেক্ষণধর্মী ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শিশু সুরক্ষায় জাতিসংঘ সনদ প্রণয়নের ২৫ বছরের মাথায় বাংলাদেশে এর উল্লেখযোগ্য বাস্তবায়ন হয়েছে, যদিও সব শিশুর জন্য একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার অনুপস্থিতি, অসহায় শিশুদের ওপর নির্যাতন, অধিকহারে বাল্য বিয়েসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে শিশু সুরক্ষা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান, কমিশনের স্থায়ী সদস্য জিনাত হক, মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব তাহমীনা বেগম, সেভ দ্য চিলড্রেনের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক প্রতিনিধি সেরন হাউসারসহ অন্যরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনেও শিশু অধিকার রক্ষায় পৃথক অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার দাবি জানায় ন্যাশনাল চিলড্রেন টাক্সফোর্স নামের একটি সংগঠন। উন্নয়ন সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন ও প্লান ইন্টারন্যাশনালের হয়ে কাজ করে সংগঠনটি।

এ বিষয়ে বিয়াম মিলনায়তনের অনুষ্ঠানে যুগ্ম সচিব তাহমীনা বেগম বলেন, শিশু অধিকার সুরক্ষায় বিশেষ তদারকির জন্য পৃথক অধিদপ্তর গঠনের কাজ এরইমধ্যে শুরু হয়েছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, “দারিদ্র্য ও নিরাপত্তাহীনতার কারণে আমাদের সমাজে বাল্য বিবাহের ঘটনা ঘটে। তবে এক্ষেত্রে সরকার ও প্রশাসন অত্যন্ত কার্যকর। খবর পেলেই স্থানীয় প্রশাসন বাল্য বিবাহ বন্ধ করে দেয়।

“দেশের সমগ্র নাগরিক সচেতন না হলে শিশু অধিকার নিশ্চিত হবে না। আমাদের দেশের নাগরিকই শিশুকে মাদক পাচারের কাজে ব্যবহার করে, অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করছে, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নিজেদের কাজে ব্যবহার করছে।”

শিশু অধিকার রক্ষায় বাল্যবিয়ে, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, জঙ্গিবাদ ও বৈষম্যমুক্ত সমাজ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান তথ্যমন্ত্রী।

শিশু অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে মন্তব্য করে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, “শিশু অধিকার বাস্তবায়ন করতে হলে, রাষ্ট্রকে সব শিশুকে নিজের সন্তান হিসেবে মনে করতে হবে। সমতা, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানব মর্যাদার ভিত্তিতে রাষ্ট্রকে পারিচালনা করতে হবে।”

চাইল্ড রাইটস অ্যাডভোকেসিতে জোটবদ্ধ হয়ে মানবাধিকার ও উন্নয়ন ইস্যুতে কাজ করছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ, এডুকো, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরাম, চাইল্ড রাইটস গভার্নেন্স, কন্যা শিশু অ্যাডভোকেসি ফোরাম, প্লান বাংলাদেশ, সেভ দ্য চিলড্রেন, টিডিএইচ নেদার‌ল্যান্ডস ও ওয়ার্ল্ড ভিশন।

এসব সংগঠনের যৌথ অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ২৫ বছরের প্রচেষ্টায় বাংলাদেশে শিশু অধিকার রক্ষার বেশ কিছু ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে।

এগুলোর মধ্যে শিশু অধিকার সনদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে শিশুদের বয়স নির্ধারণ, প্রাথমিক শিক্ষায় ৯৮ দশমিক ৭ শতাংশ শিশুর অংশগ্রহণ এবং তাদের ঝরেপড়ার হার উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় কমে আসা, শিক্ষা ক্ষেত্রে লৈঙ্গিক সমতা প্রতিষ্ঠা, শিশুনীতি-২০১১ এবং শিশু আইন-২০১৩ বাস্তবায়নকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে শিশুর জন্য একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা এখনো চালু না হওয়ায় অনেক শিশু মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিরাপত্তাহীনতা ও দারিদ্র্যের কারণে এখনো অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েকে শিশুকালেই বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন।

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে  সবচেয়ে বেশি বাল্য বিয়ে হয় বলে এতে বলা হয়।

এছাড়া পরিবারে ছেলে শিশু ও মেয়ে শিশুর মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গিগত তাফাৎ এবং অভাবী ও নিরাপত্তাহীন শিশুদের অসহায়ত্বকে কাজে লাগিয়ে তাদের অবৈধ, ঝুঁকিপূর্ণ ও অনৈতিক কাজে ব্যবহার রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।