অজ্ঞান করে সোনা-টাকা লুটের দুদিন পর গৃহকর্মী গ্রেপ্তার

খাবারে ওষুধ মিশিয়ে এক পরিবারের নয়জনকে অজ্ঞান করে সোনা ও নগদ টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার দুইদিন পর রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে ওই বাসার গৃহকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গোলাম মুজতবা ধ্রুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2014, 03:20 PM
Updated : 20 Nov 2014, 03:20 PM

বুধবার গভীর রাতে চকবাজার থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার শিল্পী বেগমের (৩০) গ্রামের বাড়ি মাদারিপুরে। 

গ্রেপ্তারের একদিন পর শিল্পীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এই প্রতিবেদকের কথা হয়। এ সময় তিনি কীভাবে ওই চুরির ঘটনা ঘটিয়েছিলেন সে বর্ণনা দেন।   

শিল্পী বলেন, “চকবাজারের ওই বাড়িতে তিনদিন কাম করসি। ফাতেমা নামের এক আপা, আমারে ওই বাড়িতে বুয়ার কাম দেওনের আগে কইসিল ওগো ঘুমের ওষুধ খাওয়াইয়া সব নিয়া নিতে হইবো। যা পামু তা দুই জনে ভাগ কইরা নিমু বইলা কথা হইসিলো।”

সোমবার রাতে রান্নার সময় মুরগির মাংসে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিল জানিয়ে শিল্পী বলেন, “ওই রাইতে মুরগির মাংস রানসিলাম। ভাতের সঙ্গে ছিল ধনিয়া পাতার ভর্তা আর ডাইল। একটা কাগজের মধ্যে ছিল ২০/২৫টা ঘুমের বড়ি।

“বাথরুমে গিয়া ওইগুলা গুড়া করসিলাম। তারপর মুরগির মাংসে তা মিশায়া দেই। সবাই রাইতের খানা খায়া ঘুমানোর পর ভোররাতে বাসার আলমারী থিকা নগদ ৫০ হাজার টাকা, অনেক গহনা নিয়া বাইর হইয়া গেসিলাম।”

ঘটনার বর্ণনা দেওয়ার সময় শিল্পীর কথাবার্তা ছিল স্বাভাবিক। 

যে বাড়িতে এই চুরির ঘটনা ঘটেছে তার গৃহকর্তা মো. হোসেন উদ্দিন সুমন (৪০) একটি প্লাস্টিক কারখানার মালিক।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, চকবাজারের জয়নাগ সড়কের তিনতলা ওই বাড়িটির তারা বাড়িওয়ালা। দ্বিতীয় তলায় সুমন তার স্ত্রী ও তিন শিশুপুত্র নিয়ে এবং নিচতলায় তার বাবা-মা, খালা-খালু এবং মনা নামের দশ বছর বয়সী অপর এক গৃহকর্মী থাকেন। 

গ্যারেজে দুই দারোয়ান থাকেন এবং বাড়ির তৃতীয় তলা ভাড়া দেওয়া রয়েছে বলেও জানিয়ে সুমন বলেন, “এ মাসের ১৪ তারিখ পরিচিত এক নারীর সূত্র ধরে শিল্পী বাসায় কাজে যোগ দিয়েছিলো। ঘটনার রাতে আমি, আমার বড় ছেলে তাসিম ও বাবা ছাড়া বাসার সবাইকে খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে এক লাখ টাকা ও দশ ভরির বেশি গহনা নিয়ে গিয়েছিল শিল্পী।”

“পরদিন সকালে আমার বড় ছেলে তাসিম এসে আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে বলে, আব্বু দাদী মনে হয় মারা গেছে। কথা বলছে না,” বলেন সুমন।

“এ কথা শোনার পরই ছুটে বাসার নিচতলায় গিয়ে দেখি আমার মেঝ ছেলে ইয়াসিনের শরীরে পোশাক নেই, সে প্রস্রাব করে দেওয়ার পরও মাটিতে ঘুমিয়ে আছে। মা আনোয়ারা বেগমকে অনেক ডাকার পর সে শব্দ করে। তবে কোনো কথা বলেনি। তখনই শিল্পীর খোঁজ করলে দেখি সে লাপাত্তা।”

দুই দারোয়ানসহ বাসায় নয়জনকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর বিকেলে তাদের জ্ঞান ফেরে বলে জানান সুমন।

পুলিশের লালবাগ অঞ্চলের উপ কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “বুধবার গভীর রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শিল্পীকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে আটক করেছে পুলিশ। তার থেকে ৩৬ হাজার টাকা ও দশ ভরি সোনা উদ্ধার করা হয়েছে।”

শিল্পী সংঘবদ্ধ দলের কোন সদস্য কিনা- সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলেও জানান পুলিশ কর্মকর্তা মফিজ।