শহীদদের স্মৃতি ফলকে নেই অহিদুর

মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য নোয়াখালীবাসীর কাছে স্মরণীয় নাম শহীদ অহিদুর রহমান অদুদ।

নোয়াখালী প্রতিনিধিআবু নাছের মঞ্জু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2014, 03:14 PM
Updated : 20 Nov 2014, 03:26 PM

২১ নভেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এদেশীয় দোসরদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে শহীদ হন তিনি।

প্রয়োজনীয় উদ্যোগের অভাবে  জেলায় সরকারিভাবে নির্মিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকে স্থান পায়নি এই বীর যোদ্ধার নাম। এনিয়ে  নোয়াখালী অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের মনে ক্ষোভ রয়েছে।

অহিদুর রহমান অদুদের জন্ম ১৯৪৯ সালে ২৮ জানুয়ারি নোয়াখালী জেলা শহরের ল ইয়ার্স কলোনিতে। তার বাবা মুজিবুর রহমান মোক্তার অবিভক্ত বাংলার গণপরিষদ সদস্য এবং পূর্ব পাকিস্তান আইনসভার সদস্য ছিলেন।

১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ঢাকসু) সমাজকল্যাণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের একজন সদস্য ছিলেন।

২৫ মার্চের পর ভারতে উচ্চতর গেরিলা প্রশিক্ষণ নিয়ে নোয়াখালী ফিরে আসেন অদুদ। তিনি অবিভক্ত সদর থানার বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্সের (বিএলএল) অধিনায়ক ছিলেন।

তিনি ও তার সহযোদ্ধারা কবিরহাট, চাপরাশিরহাট, কালামুন্সি রাজাকার ক্যাম্পে আক্রমণ চালিয়ে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।

রণাঙ্গণে অহিদুর রহমানের সহযোদ্ধা কবি এনাম আহসান বলেন, "২০ নভেম্বর বিএলএফ সদর কমান্ডার অহিদুর রহমান ও কোম্পানীগঞ্জ থানা কমান্ডার ওবায়দুল কাদেরের(বর্তমান সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী) নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা চারটি দলে ভাগ হয়ে রাজাকার মিলিশিয়া ক্যাম্পে আক্রমণ করি। ২১ নভেম্বর ভোরে শত্রুর একটি গুলিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অদুদ।"

বৃহত্তর নোয়াখালী জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মিজানর রহমান জানান, স্বাধীনতার পর রাজাকার মিলিশিয়া ক্যাম্পের স্থান (বর্তমান কোম্পানীগঞ্জের তালমোহাম্মদের হাট) প্রতিষ্ঠা করা হয় বামনী কলেজে।

মুক্তিযোদ্ধাদের দাবির প্রেক্ষিতে কলেজের সামনের সড়কটিকে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা অদুদ সড়ক নামকরণ করা হয়। তবে, জেলা সদরে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে স্থান পায়নি এই বীরের নাম।

“আমরা(মুক্তিযোদ্ধারা) একবার  তখনকার ডিসির সঙ্গে এনিয়ে কথা বলার পর রং দিয়ে অস্থায়ীভাবে তার নাম লেখা হয়, যা এখন তা মুছে গেছে।”

আগামী ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে তার নাম স্মৃতিফলকে স্থায়ীভাবে লিপিবদ্ধ না করা হলে  বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন বলে জানান মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মিজানর রহমান।

শহীদ অহিদুর রহমান অদুদ স্মৃতি সংসদের সভাপতি শাহ আলম বলেন, “শহীদ অহিদুর রহমান অদুদ আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন। তার বীরত্বগাথা নতুন প্রজম্মের কাছে তুলে ধরার জন্য আমরা এই স্মৃতি সংসদ প্রতিষ্ঠা করি। আমাদের দাবি হচ্ছে সরকারিভাবে যেন এখানে একটা পাঠাগার, মিলনায়তন ও স্মৃতিস্তম্ভ করা হয়।”

শহীদ অহিদুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত বামনী কলেজকে তার নামে নামকরণের দাবিও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস বলেন, “অহিদুর রহমান অদুদের নাম শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকে স্থায়ীভাবে স্থাপন করার বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার স্মৃতি রক্ষার্থে কলেজের নামকরণ, পাঠাগার স্থাপনের বিষয়ে উদ্যোগ নেব।”