বুধবার বেসরকারি সংস্থা ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়ে আয়োজিত এক প্রচারাভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমি ৩৩ বছরের কূটনীতিক হিসেবে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে আমার জীবন কাটিয়েছি।
“এসব দেশে আমি শিখেছি যে, অর্থবহ উন্নয়ন ও টেকসই পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হলে নারীদের সঙ্গে নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিষ্ঠা ও শক্তিশালী করে তোলার ক্ষেত্রে এটি আরো বেশি সত্য।”
২০০৯ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ২০২০ সালের মধ্যে সব রাজনৈতিক দলের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায় পর্যন্ত ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য অন্তর্ভুক্তির কথা বলা হয়েছে।
সেই অনুযায়ী রাজনীতিতে নারীদের বিভিন্ন বিষয়ে দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণের উদ্দেশে ২০১২ সাল থেকে এই প্রচারাভিযানের কার্যক্রম শুরু হয়। এতে অর্থায়ন করছে দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি ও ইউকেএআইডি।
অনুষ্ঠানে ঢাকায় ইউএসএআইডি’র মিশন ডিরেক্টর ইয়ানিনা জারুজেলস্কি তার বক্তব্যে বলেন, “সামাজিক ও রাজনৈতিক নীতি-কৌশলের ওপর নারীদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণের একটি ইতিবাচক প্রভাব রয়েছে।
“পাশাপাশি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে একটি দেশের জনগণের জীবনমানের উন্নয়রেন সরাসরি ভূমিকা রাখে। এ কারণেই এ প্রচারাভিযানের নাম, ‘নারীর জয়ে সবার জয়’।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রেসিডেন্ট আয়েশা খানম, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি সেলিমা রহমান, যুব মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য অধ্যাপক মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের প্রতিষ্ঠাতা সেলিমা আহমেদ এবং ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি চিফ অফ পার্টি কেটি ক্রোক।
সেলিমা রহমান বলেন, “বাংলাদেশের রাজনীতিতে নারীদের অংশগ্রহণ এখনো পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার নিচে চাপা পড়ে আছে। তাই রাজনীতিতে নারীদের আরো এগিয়ে নিয়ে আসতে তাদের অধিকারের ক্ষেত্রে দলমত নির্বিশেষে সব নারীদের এক হতে হবে।”
অপু উকিল বলেন, “সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য চিহ্নিত এলাকাগুলো ২০০৪ সালে বিলুপ্ত করে দেয়া হয়, যার ফলে সংরক্ষিত আসনের নারী সংসদ সদস্যরা কার্যকরভাবে কোনো উন্নয়ন কাজে অংশ নিতে পারেন না।”
সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য পুণরায় এলাকা চিহ্নিত করার দাবি জানান তিনি।
অধ্যাপক মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী বলেন, “জাতীয় পার্টিতে শুরু থেকেই বিভিন্ন পেশাজীবী সদস্যদের স্ত্রী হওয়ার সুবাদে নারী সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত হয়েছিলেন অনেক নারী। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও তারা পূর্ণ সদস্য হিসেবে জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে ভূমিকা রেখে চলেছেন।”
অনুষ্ঠানে দেশের বৃহত্তম তিনটি দল- আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি ২০০৯ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী তাদের নিজ নিজ দলের তৃণমূল পর্যায় থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উদ্দেশে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের ডেপুটি চিফ অফ পার্টি কেটি ক্রোক।
তিনি জানান, অ্যাডভোকেসি, নেতৃত্ব গঠনের প্রশিক্ষণ এবং যোগাযোগ বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করার মধ্য দিয়ে ‘নারীর জয়ে সবার জয়’ প্রচারাভিযানটি সারা দেশজুড়ে ১০ হাজারেরও বেশি প্রতিশ্রুতিশীল নারী নেত্রীর সঙ্গে কাজ করছে ২০১২ সাল থেকে।
“আগামী বছর নারীরা তাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বাড়ানোর একটি সুবর্ণ সুযোগ পেতে যাচ্ছে, কারণ রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নেতা নির্বাচনে কাউন্সিল আয়োজন করছে।”