রাজধানীর অভিজাত এলাকায় পানির আকাল

রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমণ্ডির একটি সড়কে পানি সংকটে বেকায়দায় বাসিন্দারা। ছয় মাস ধরে সমস্যা চললেও গত দুই মাস চরম বিড়ম্বনার কথা জানিয়েছেন তারা।

সালাহউদ্দিন ওয়াহিদ প্রীতমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2014, 05:31 PM
Updated : 19 Nov 2014, 05:40 PM

ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ের উল্টোদিকে ধানমণ্ডি ৩/এ সড়ক। এখানকার ১২টি বাড়িতে বসবাসরত ১০৩টি পরিবারকেই পোহাতে হচ্ছে পানির ভোগান্তি।

ছয় মাস আগে সমস্যা শুরুর পর দিনে চার/পাঁচ ঘণ্টা লাইনে পানি মিললেও গত দুই মাসে তাও পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কয়েক বাসিন্দা।

সমস্যা নিয়ে ওয়াসার কর্মকর্তাদের কাছে গেলে দুই/একদিনের মধ্যে সমাধানের আশ্বাস পেয়ে ফিরে আসেন তারা।

একটি প্রকল্পের কারণে এ সমস্যা হচ্ছে জানিয়ে ওয়াসার উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস ডি এম কামরুল আলম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিডিউল অনুযায়ী ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে প্রজেক্টের কাজ শেষ হবে। তবে লালমাটিয়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আগামী দুই/এক দিনের মধ্যেই ওই এলাকার পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।”

তবে ওয়াসার কর্মকর্তার ওই আশ্বাসে ভরসা রাখতে পারছেন না সেখানকার বাসিন্দারা।

ওই সড়কের ১৭ নম্বর বাড়ির বাসিন্দা মাহমুদ হাসান রানা বলেন, “গত দুই মাস ধরে আমরা এই আশ্বাস শুনে আসছি।”

পানি সংকটের চিত্র তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চার/পাঁচ দিন পরপর হয়তো আধ ঘণ্টা বা এক ঘণ্টার জন্য পানি আসে, কখনো বা তাও আসে না।”

পানির অভাবে রান্না, ধোয়া-মোছার কাজও করতে পারছেন না জানিয়ে গৃহিণী মণি কুন্তলা দত্ত বলেন, “কয়েক মাস ধরে তো পানির সংকট চলছেই, কিন্তু গত দুই মাস ধরে যে অবস্থা তাতে আমাদের নাভিঃশ্বাস উঠে গেছে।

“রান্না, ধোয়া-মোছা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে কোনো কিছুই আমরা স্বাভাবিকভাবে করতে পারছি না।”

কীভাবে এলাকার লোকজন পানির চাহিদা মেটাচ্ছেন জানতে চাইলে সেখানকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী মাহমুদুল হক খোকন জানান, পানি নিয়ে ওয়াসার গাড়ি আসে। তা থেকে পানি সংগ্রহ করেই কোনো রকমে চলছে।

এক গাড়ি পানির জন্য মোট ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা ব্যয় হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এরমধ্যে ৬০০ টাকা দিতে হয় পানি বাবদ। আর ১০০ থেকে ২০০ টাকা চালককে দিতে হয় ‘বখশিশ’ হিসেবে।

তবে ওয়াসার গাড়িও নিয়মিত না হওয়ায় সংকট ‘অসহনীয়’ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন কয়েকজন।

“অনেক সময় গাড়িও অনিয়মিত আসে। তখন ওয়াসা অফিসে ফোন করতে হয়,” বলেন সড়কের ১৭/২ নম্বর বাসার বাসিন্দা ডা. রিয়াজুল হাসান।

ওই সড়কের ৫৭ নম্বর বাড়িতে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক এম মান্নান।

তিনি বলেন, “গত ১৭ বছর ধরে এই এলাকায় আছি-এমন অবস্থা কোনো দিন দেখিনি। আমাদের খুব কষ্ট হচ্ছে।”

ওয়াসা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পানি সংকটের কারণ নিয়ে স্পষ্ট বক্তব্য না দেওয়ার অভিযোগ করে অ্যাডভোকেট মাহমুদ হাসান রানা বলেন, “কী কারণে পানি আসছে না সেটা ওয়াসা কর্মকর্তারা আমাদের স্পষ্ট করে বলছেন না। যখনই তাদের ফোন করা হয় তারা বলেন, লাইনে কাজ চলছে; আগামী কালের মধ্যে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।”

এ বিষয়ে ওয়াসার লালমাটিয়া জোনের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল ওয়াহাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “দুই মাস ধরে সমস্যা হচ্ছে এ তথ্যটি সঠিক নয়। কিছু দিন ধরে সমস্যা হচ্ছে। অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান হবে।”

ঠিক কী কারণে এই সমস্যা হচ্ছে তা স্পষ্ট করে বলেননি তিনি।

তবে ওয়াসার উপ ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুল আলম চৌধুরী বলেন, “ওখানে আমাদের একটি প্রজেক্টের কাজ চলছে। ঢাকা ওয়াটার সাপ্লাই সেক্টর ডেভেলপমেন্ট নামের এই প্রজেক্টের আওতায় ওই এলাকার পানির লাইনগুলো রিপ্লেস করা হচ্ছে।

“এ কারণেই সাময়িক অসুবিধা হচ্ছে। আমরা আশা করি, এই সাময়িক সমস্যা এলাকাবাসী স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবেন এবং আমাদের সহযোগিতা করবেন।”