ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সঙ্কটে হয়ে ওঠে গরিবের ‘রান্নাঘর’

খাদ্য সঙ্কটে পড়া অতি দরিদ্রদের দিকে যখন এনজিওগুলোও চায় না, তখন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়ে মাজার, মন্দিরে মতো ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো কার্যত গরিবের ‘রান্নাঘর’ হয়ে উঠে বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2014, 05:04 PM
Updated : 19 Nov 2014, 05:04 PM

অক্সফাম, ইনস্টিটিউট অফ ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ও ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের যৌথভাবে চালানো এই গবেষণার প্রতিবেদন বুধবার ‘খাদ্যমূল্যের ওঠানামা : সঙ্কটের মধ্যে বসবাস’ শীর্ষক এক কর্মশালায় প্রকাশ করা হয়।

রাজধানীর কল্যাণপুরের বস্তিবাসী, আশুলিয়া, নওগাঁর ধামইরহাট, খুলনার কয়রা এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট মহানগরে বসবাসকারী কয়েকটি দরিদ্র পরিবারের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের মাধ্যমে পাওয়া ফল প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে।

২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল সময়ে খাদ্য, জ্বালানি ও অর্থনৈতিক সঙ্কট অতি দরিদ্রদের ওপর কী ধরনের প্রভাব ফেলে, তা দেখতে এই গবেষণা করা হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী সিনেট হলে কর্মশালায় গবেষণা প্রতিবেদনের সার সংক্ষেপ তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যলয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ফেরদৌস জাহান।

তিনি মসজিদ, মন্দির, মাজারে গরিবদের খাওয়ার ব্যবস্থার সুযোগের কথা তুলে ধরে বলেন, খাদ্য সঙ্কটের সময় কোনো কোনো মাজারে দুপুরে ৫০০ জনের খাওয়ার ব্যবস্থাও হয়েছে।  

বৈশ্বিক মন্দার প্রভাবে পণ্যের দাম বেড়ে ২০০৭ সালে বাংলাদেশে যে খাদ্য সঙ্কট দেখা দিয়েছিল, তাতে অতিদরিদ্র মানুষ কম খাবার গ্রহণ করে অপুষ্টির শিকার হয়েছিল বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।

“কাজের সময় বাড়িয়েও পর্যাপ্ত খাবার জোগাড় করতে পারেনি (অতি দরিদ্ররা)। শিশুদের কাজে লাগিয়ে পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা করেছে।”

তবে বর্তমানে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ বৃদ্ধি, সার ও বীজের দাম ও ব্যবস্থাপনায় উন্নতি, স্কুলে উপবৃত্তির আওতা বৃদ্ধি, ওএমএসের আওতা বাড়ানো, মজুরি ও কাজের সুযোগ বৃদ্ধি এবং বাজার ব্যবস্থাপনা ও খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করায় অতিদরিদ্ররা দুবেলা খেতে পাচ্ছে, বলা হয় প্রতিবেদনে।  

তবে এরপরও পুষ্টিমান বা সুষম খাবারের নিশ্চয়তা সবার মিলছে না বলে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

“ট্রাকে বিক্রি করা সস্তা চাল, ভাঙা ডিম, পচা মাছ, খোলা আটা, মুরগির পা ও গরুর ভুড়ি খাচ্ছে অনেকে।”

বাংলাদেশে অনেক আন্দোলনই খাদ্যকেন্দ্রিক বলে গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

এতে বলা হয়েছে, অনেক পণ্যে নায্য মূল্য না পাওয়ায় কৃষক আন্দোলন করেছে, ঠিকমতো সরবরাহ ও মূল্য নির্ধারণে সমস্যার কারণে হরতাল হয়েছে, আবার তৈরি পোশাক শিল্পের মজুরি বাড়ানোর আন্দোলনের পেছনেও পরোক্ষভাবে খাদ্যদ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব ছিল।

কর্মশালায় অক্সফামের মনীষা বিশ্বাস, যুক্তরাজ্যের আইডিএসের নাওমী হোসেন গবেষণা বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।

উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন আইনজীবী সারাহ হোসেন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ফেলো মির্জা হাসান, কোস্ট ট্রাস্টের ফেরদৌস আরা রুনু, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদের আলফাজুর রহমান, ওয়েব ফাউন্ডেশনের নবীরুল ইসলাম প্রমুখ।

মুক্ত আলোচনায় বক্তারা অতি দরিদ্রদের জন্য রেশন ব্যবস্থা চালুর পাশাপাশি খাদ্য আইন প্রণয়নের পরামর্শ দেন।