আন্দোলনে সাড়া না থাকাই সরকারে আস্থার প্রমাণ: হাসিনা

সরকারবিরোধী আন্দোলন মানুষের সাড়া পাচ্ছে না মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এটাই সরকারের ওপর জনগণের পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসের প্রমাণ।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2014, 12:14 PM
Updated : 19 Nov 2014, 07:34 PM

বুধবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি বলেন, জনগণের ‘আস্থা ও বিশ্বাসই’ এ সরকারের ‘বড় শক্তি’।

“আল্লাহর রহমতে এটুকু বলতে পারি- এখন বাংলাদেশের জনগণের সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আমাদের এ সরকারের ওপর রয়েছে।”

এর ব্যাখ্যায় কোনো দলের নাম উল্লেখ না করেই প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জনগণের আস্থার এটাই বড় প্রমাণ- কিছু দল অনবরত সরকার উৎখাত ও আন্দোলনের সময় দিয়েও জনগণের সাড়া পাচ্ছে না। এ অর্থ এ দাঁড়াচ্ছে- জনগণের সম্পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস আমাদের ওপর রয়েছে”।

গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি গত ছয় মাস ধরেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণার হুমকি দিয়ে আসছে। এসব দাবিতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দেশের বিভিন্ন স্থানে সমাবেশও করছেন।

অধ্যাপক মো. আলী আশরাফের এক সম্পূরক প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জনগণ জানে- আমরাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।... জনগণ বিশ্বাস করে- যে দল দেশের জন্য ত্যাগ করে এবং জেল-জুলুম ও কষ্ট করেছে সে দল সরকারে থাকা মানেই দেশ ও জাতির কল্যাণের কাজ করবে।”

সরকার দেশের উন্নয়নে নির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে এগোচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দিক হারা নাবিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না। আমরা দেশের জন্য সেই দিক-দর্শন নিয়েই এগোচ্ছি। এটা বাস্তবায়নের জন্য সব থেকে বেশি দরকার-জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করা।”

সরকারে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সাংসদ ও জনগণের সহযোগিতা চান তিনি।

স্বতন্ত্র সাংসদ রুস্তম আলী ফরাজীর একটি তারকাচিহ্নিত প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সিপিএ-আইপইউ’র মতো আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থায় বাংলাদেশের জয় একদিকে যেমন বিরল অর্জন তেমনি বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্কেরই প্রমাণ।

“এর মধ্য দিয়ে এটি নিশ্চিত হয়েছে যে, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বর্তমান সরকারের অব্যাহত অগ্রযাত্রার বিষয়ে বিশ্ব সম্প্রদায় পুরোপুরি আস্থা রাখে।”

তিনি বলে, গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ যে আজ বিশ্বে ‘একটি রোল মডেল’ বিবেচিত হচ্ছে, তা প্রমাণ হয়েছে সংসদীয় গণতন্ত্রের প্রতিনিধিত্বকারী এ দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থার সর্বোচ্চ পদে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সাবের হোসেন চৌধুরীর নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে।

গত নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিএনপি বলে আসছে, অর্ধেক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এ সংসদ গণতান্ত্রিক বিশ্বের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।    

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “সিপিএ ও আইপিইউ-এর নেতৃত্বের ভার এখন বাংলাদেশের। এ যেমন বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্ব নেতাদের আস্থার বহিঃপ্রকাশ, তেমনি বাংলাদেশের সংসদের প্রতিও তাদের বিশ্বাসের প্রতিফলন।”

রুস্তম আলী ফরাজীর আরেক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক ফোরামে নির্বাচিত হয়ে আসার পেছনে প্রার্থী নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। এবার সব দেশের সমর্থনও পাওয়া গেছে।

বিএনপি শাসনামলে ওআইসির নির্বাচনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরাজয়ের দিকে ইংগিত করে শেখ হাসিনা বলেন, “যুদ্ধাপরাধীকে প্রার্থী করলে কোনো দেশই সমর্থন দেয়নি।”

‘দুই ঘণ্টায়’ ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম

কুমিল্লা-১ আসনের সুবিদ আলী ভুঁইয়া জানতে চান ঢাকা-দাউদকান্দি-কুমিল্লা পর্যন্ত নতুন রেল লাইন নির্মাণে সরকারের পরিকল্পনা আছে কি-না?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম কর্ড লাইন নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

“চায়নার নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এই প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দুই ঘণ্টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াত করা যাবে।”

মোবাইলের ‘সর্বনিম্ন’ কলরেট

লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের এ কে এম শাহজাহান কামালের তারকা চিহ্নিত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মোবাইল ফোনের কল রেট আর কমানোর পরিকল্পনা এখন নেই।

বর্তমানে মোবাইল ফোনের কলরেট প্রতি মিনিট সর্বনিম্ন ২৫ পয়সা থেকে ২ টাকা পর্যন্ত নির্ধারিত রয়েছে।

“দেশে সকল মোবাইল অপারেটরের গড় কলরেট প্রতি মিনিট ৮৩ পয়সা। এটি বিশ্বের অন্যতম সর্বনিম্ন কলরেট হিসেবে বিবেচিত। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন কলরেট পুনঃনির্ধারণে সরকারের আপাতত কোনো পরিকল্পনা নেই,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।    

শিক্ষক নিয়োগে পৃথক কমিশন

চট্টগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, শিক্ষক নিয়োগে গুণগত মান, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে পিএসসির আদলে একটি পৃথক কমিশন গঠনের চিন্তা-ভাবনা সরকারের রয়েছে।

কমিশন গঠনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তৈরিতে গত ২৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

“আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে কমিটি যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষক নিয়োগে পৃথক কমিশন গঠন করা হবে,” বলেন প্রধানমন্ত্রী।

মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম

সুনামগঞ্জ-১ আসনের সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে প্রতি উপজেলা/থানার সর্বোচ্চ তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোট ১ হাজার ৪৯৭টি স্কুলে একটি ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া, সাউন্ডসিস্টেম ও ইন্টারনেট মডেম সরবরাহ করা হয়েছে।

চলতি অর্থ বছরে আরো ৩ হাজার ৯৩০টি স্কুলে একই প্রকারের উপকরণ বিতরণের জন্য অপেক্ষমান এবং তিন হাজার ৫০৪টির জন্য সরঞ্জাম সংগ্রহ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, “২০১৬ সালের জুন মাসের মধ্যে ৩৯ হাজার ৯০৭টি স্কুলে একটি করে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণি কক্ষ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ চালু করা হবে। ”

তিনি আরো জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে আইসিটি শিক্ষার প্রচলন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৬৪ জেলায় ২০ হাজার ৫০০ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে।

ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্র

জামালপুর-২ আসনের ফরিদুল হক খানের প্রশ্নের জবাবে প্রধামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ৪ হাজার ৫৪৭টি ইউনিয়নে ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রতিমাসে প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ সেবা পাচ্ছে। এর ফলে মোট ৯ হাজার ৯৪ জন উদ্যোক্তার কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে। 

জলবায়ু ট্রাস্ট

কক্সবাজার-১ আসনের মোহাম্মদ ইলিয়াছের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ডে ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এই অর্থ দিয়ে দুর্যোগে ক্ষতি মোকাবেলায় বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

ঝুঁকি ও ক্ষতি মোকাবেলায় বৈদেশিক সাহায্য নির্ভরতা ছাড়া দুর্যোগ ঝুঁকি কমাতে বর্তমান সরকারের বিশেষ প্রস্তুতি তুলে ধরেন তিনি।

সশস্ত্র বাহিনীতে নারী সদস্য

হবিগঞ্জ-১ আসনের আব্দুল মুনিম চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সামরিক বাহিনীতে বর্তমানে ১ হাজার ৪২৫ জন নারী চাকরিরত রয়েছেন। এর মধ্যে সেনাবাহিনীতে ৯১২ জন, নৌবাহিনীতে ২৭০ জন এবং বিমানবাহিনীতে ২৪৩জন নারী কর্মকর্তা রয়েছেন।