বিশ্ববিদ্যালয় যেন ‘সনদ বিক্রির দোকান’ না হয়: রাষ্ট্রপতি

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে মুনাফা অর্জনের ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পরিণত না হয় তা নিশ্চিত করতে সম্মিলিত প্রচেষ্টার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2014, 11:36 AM
Updated : 19 Nov 2014, 12:12 PM

তিনি বলেছেন, “শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কখনোই মুনাফা অর্জনকারী ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হতে পারে না এবং তা হওয়া কাম্যও নয়। তাই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যাতে মুনাফা অর্জনের ক্ষেত্র হিসেবে পরিণত না হয়ে জ্ঞানার্জনের প্রকৃত ক্ষেত্রে পরিণত হয় তা সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে।”

বুধবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বেসরকারি উত্তরা ইউনিভার্সিটির তৃতীয় সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি এসব কথা বলেন।  

কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠার প্রসঙ্গ টেনে আবদুল হামিদ বলেন, “সাম্প্রতিককালে কিছু কিছু বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে পত্র-পত্রিকায় আলোচনা ও সমালোচনা হচ্ছে। কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগও এসেছে, যা জাতিকে আশাহত করেছে।”

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর তাগাদা দিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এখনো সঠিক জ্ঞান-চর্চার কেন্দ্র হয়ে গড়ে উঠতে পারেনি। এখানকার পরীক্ষা পদ্ধতিতে যে ফল পাওয়া যায় তা আহরণ করা ফল; ফলন করা ফল নয়।

“এমনতরো শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের লোভ আছে, ভক্তি নেই। আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে জ্ঞানের মহাতীর্থে পরিণত করতে না পারলে উচ্চশিক্ষার যে মূল আদর্শ এবং লক্ষ্য তা অর্জন সম্ভব হবে না। এসব প্রতিষ্ঠান তখন সার্টিফিকেট প্রদান সর্বস্ব শিক্ষায় পরিণত হবে।”

শুধু শিক্ষাদান নয়, শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ততা ও মুক্ত বুদ্ধি চর্চার ক্ষেত্র তৈরি করে দিতেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।

“বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে যুগোপযোগী শিক্ষার পাশাপাশি সৃজনশীল কর্মকাণ্ড, মুক্ত বুদ্ধি চর্চা ও চিন্তার স্বাধীনতা বিকাশের ক্ষেত্র উন্মুক্ত রাখতে হবে, যাতে করে শিক্ষার্থীরা জাতীয় জীবনের সর্বক্ষেত্রে নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জনসহ বিজ্ঞানমনস্ক, অসাম্প্রদায়িক, মানবমুখী ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারে,” বলেন তিনি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দরিদ্র পরিবারের ছেলে-মেয়েদের পড়ার সুযোগ করে দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

আবদুল হামিদ বলেন, “বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন ব্যয়বহুল বিধায় এখানে সমাজে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া করার সুযোগ কম। এজন্য উচ্চশিক্ষা প্রদানে তাদের বৃত্তিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়াতে হবে। কেবল বিত্তবান ঘরের সন্তান নয়, দরিদ্র ঘরের মেধাবী সন্তানরাও যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পায় সে বিষয়টি সুবিবেচনার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।”

সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি বলেন, “দেশের সাধারণ জনগণের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোরও দায়বদ্ধতা আছে। সে দায়বদ্ধতা হল- মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রেখে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত করা। গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করা এবং শিক্ষার্থীদের আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তোলা। এ লক্ষ্য সামনে রেখে সরকার দেশে সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র সম্প্রসারিত করেছে। গড়ে উঠেছে নতুন নতুন বিশ্ববিদ্যালয়।

“এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্বের তুলনায় বেশি সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে, যারা জাতীয় উন্নয়নে অবদান রাখছে।”

সমাবর্তনে ডিগ্রীপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি জাতির প্রতি তাদের দায়িত্বও মনে করিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আবদুল হামিদ।

“মনে রাখবে, এ দেশ ও সমাজ আজ তোমাদের এ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তাদের কাছে তোমরা ঋণী। তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, মেধা ও মনন দিয়ে দেশমাতৃকার কল্যাণ করতে পারলে সে ঋণ কিছুটা হলেও শোধ হবে। সমাজের প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তোমরা কখনও হতাশ হবে না, মনে সাহস রাখবে। কুসংস্কার ও অজ্ঞতার বিরুদ্ধে জ্ঞানের মশালকে তুলে ধরবে। তোমরা কর্মজীবনে যে যেখানে থাক না কেন এ দেশ, এদেশের জনগণকে ভুলবে না,” বলেন রাষ্ট্রপতি।

সমাবর্তনে এ বছর উত্তরা ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী মোট তিন হাজার ১১ শিক্ষার্থীকে সনদ দেওয়া হয়। দুই জন কৃতী শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয় স্বর্ণপদক।

সমাবর্তন বক্তা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী ছাড়াও উত্তরা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য এম আজিজুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বক্তব্য দেন।