সোনা চোরাচালান: বিমানের ডিজিএমসহ গ্রেপ্তার ৫

বিমানবন্দর দিয়ে সোনা চোরাচালানে জড়িত থাকার অভিযোগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের এক উপ মহাব্যবস্থাপকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2014, 06:23 AM
Updated : 19 Nov 2014, 12:49 PM

ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (উত্তর) শেখ নাজমুল আলম জানান, মঙ্গলবার গভীর রাতে রাজধানীর বিমানবন্দর, উত্তরা ও বসুন্ধরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

এরা হলেন- বাংলাদেশ বিমানের উপ মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এমদাদ হোসেন, প্ল্যানিং অ্যান্ড শিডিউলিং প্রধান ক্যাপ্টেন আবু মোহাম্মদ আসলাম শহীদ, শিডিউল ম্যানেজার তোজাম্মেল হোসেন, উত্তরার ফারহান মানি এক্সচেঞ্জের মালিক হারুন অর রশিদ এবং বিমানের ঠিকাদার মাহমুদুল হক পলাশ।

গত প্রায় বছর দুই ধরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় প্রতিদিনই সোনার চালান ধরা পড়লেও এই প্রথম গুরুত্বপূর্ণ কাউকে গ্রেপ্তার করা হলো। 

শাহজালাল বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের দায়িত্বে থাকা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কারো সহযোগিতা ছাড়া এভাবে নিয়মিত সোনা চোরাচালন যে সম্ভব নয়- সে সন্দেহ আগে থেকেই ছিল।

এসব ঘটনায় কখনো যাত্রীদের ব্যাগে বা শরীরে লুকানো অবস্থায়, আবার কখনো উড়োজাহাজের টয়লেট বা আসনের নিচে পরিত্যক্ত অবস্থায় বিভিন্ন পরিমাণ সোনার বার পাওয়া যায়।

এর মধ্যে গত ২৬ এপ্রিল দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একটি উড়োজাহাজে ১০৬ কেজি সোনা পান শাহজালাল বিমানবন্দরের শুল্ক কর্মকর্তারা।

 

মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, গত ১২ নভেম্বর বিমানের একটি ফ্লাইট থেকে দুই কেজি ৬০০ গ্রাম সোনা ও ছয়টি আইপ্যাডসহ মাজহারুল আফসার নামের বিমানের এক কেবিন ক্রুকে আটক করা হয়। তিন দিনের রিমান্ডে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই মঙ্গলবার রাতে অভিযান চালানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, মূলত শফিউল আজম নামের এক ব্যক্তি দুবাই থেকে চোরাচালানের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন। আর পলাশ এ কাজের সমন্বয় করতেন।

অর্থ আদান প্রদানের বিষয়টি দেখতেন হারুন অর রশিদ। বিদেশ থেকে আনা চালান নির্বিঘ্নে কাস্টমস পার করতে বিমানের ক্যাপ্টেন থেকে শুরু করে অন্যান্য পর্যায়ে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হতো।

“ঠিকাদার পলাশ বেশ প্রভাবশালী। তাকে আমরা ভোরে গ্রেপ্তার করি। এখনো তার সাথে কথা বলার সুযোগ হয়নি। আমাদের কাছে কিছু তথ্য আছে, আমরা সেগুলো যাচাই বাছাই করে দেখব।”

মনিরুল জানান, বিমান বালা থেকে শুরু করে বিমানের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের নাম এসেছে তাদের তদন্তে। পলাশের স্ত্রী নিজেও একজন বিমানবালা।

এই চক্রের সঙ্গে আরো কয়েকজন কেবিন ক্রু জড়িত বলে তথ্য আছে পুলিশের হাতে। তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েই তাদের বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে চায়।

“গ্রেপ্তারকৃতরা ছাড়াও এ চক্রের সাথে জড়িত আরো বেশ কিছু নাম এসেছে। এগুলো যাচাই বাছাই করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।”

বিমানবন্দর কাস্টমসের কেউ এতে জড়িত কি না জানতে চাইলে এই  পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “যার যার নাম আসবে সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে।”

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাপ্টেন মোসাদ্দেক আহমেদ বলেন, “আমরা গণমাধ্যমের খবরে তাদের গ্রেপ্তারের বিষয়টি জানতে পেরেছি। অপরাধে জড়িত থাকার বিষয়টি প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”