নৌবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাহবুবুর রহমান বুধবার সকালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থানায় মামলা দুটি দায়ের করেন।
পতেঙ্গা থানার ওসি শাহাবুদ্দিন আহমেদ জানান, একটি মামলা হয়েছে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে। অন্য মামলার অভিযোগ মানব পাচার।
অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলায় মিয়ানমারের ৮২ নাগরিককে আসামি করা হয়েছে। তারা সবাই আটক ট্রলারের আরোহী ছিলেন।
আর মানব পাচারের মামলার ১৬ আসামি ওই পাচারকারী চক্রের দালাল। তাদেরও ওই ট্রলার থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
নৌবাহিনীর যুদ্ধ জাহাজ ‘দুর্জয়’ সোমবার সকাল ৯টার দিকে সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় ১২০ নটিক্যাল মাইল দক্ষিণ পশ্চিমে গভীর সাগর থেকে ট্রলারটি আটক করে। সেখানে গাদাগাদি করে নারী ও শিশুসহ ৬২৫ জন মানুষ দেখে নৌবাহিনীর সদস্যরাও বিস্মিত হন।
পরে নৌবাহিনীর পাহারায় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ট্রলার ও আরোহীদের চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর রেডি রেসপন্স বার্থ (আরআরবি) জেটিঘাটে নিয়ে আসা হয়।
দুর্জয়ের কমান্ডার নাঈম রহমান জানান, ওই ট্রলারের আরোহীদের পাচারের উদ্দেশ্যে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
ট্রলারের ভেতর অমানবিকভাবে গাদাগাদি করে বসিয়ে রাখা হতো আরোহীদের। খাবার বা পানি চাইলে চলত মারধর। এমনকি মাথা উঁচু করলেও মারধর করা হতো।
ছয় বন্ধুসহ ওই ট্রলারের যাত্রী হয়েছিলেন সুনামগঞ্জের জালালগঞ্জের মাগুর গ্রামের জমির হোসেন (৩২)।
তিনি জানান, গত ১০ অক্টোবর কক্সবাজার বেড়াতে এলে সুজন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিচয় হয়। তিনি জনপ্রতি দুই লাখ টাকায় তাদের মালয়েশিয়া পৌঁছে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
তারা জনপ্রতি ৫০ হাজার টাকা করে দিলে কক্সবাজার শহরের কলাতলী এলাকায় একটি হোটেলে তাদের দুই দিন রাখা হয়। এরপর ২ নভেম্বর হিমছড়ি এলাকা থেকে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তাদের জোর করে তুলে দেওয়া হয়।
ছোট নৌকাটি চারদিন পর তাদের পৌঁছে দেয় বড় ট্রলারটিতে। সেখানে পাচারকারীরা তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়।
ট্রলারে প্রতিদিন তাদের দুই বেলা অল্প পরিমাণ ভাত দেওয়া হতো বলে জানান জমির।
শুধু বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নয়, মালয়েশিয়া যেতে ওই ট্রলারে জড়ো করা হয়েছিল মিয়ানমারের মংডু এলাকার বাসিন্দাদেরও। তেমনই একজন ২০ বছর বয়সী তসলিমা।
তিনি জানান, তার স্বামী মালয়েশিয়ায় থাকেন। স্বামীর ফোন পেয়ে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য সাত দিন আগে মংডু থেকে ছোট একটি ট্রলারে করে বড় এই ট্রলারে এসে উঠেছিলেন।