১১ জনের খোঁজ চায় এনআইএ, র‌্যাব চায় ৫১ জনের

বর্ধমানে বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনসহ ১১ সন্ত্রাসীর একটি নামের তালিকা র‌্যাবকে দিয়েছে ভারতের এনআইএ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2014, 03:36 PM
Updated : 23 Nov 2014, 04:29 AM

অন্যদিকে র‌্যাব ভারতে পালিয়ে থাকা ১০ জঙ্গিসহ ৫১ অপরাধীর একটি তালিকা দিয়েছে ভারতের জাতীয় তদন্ত সংস্থাকে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় র‌্যাব সদর দপ্তরে সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এই তালিকা দুটি বিনিময় হয় বলে র‌্যাবের ‌মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান জানিয়েছেন।

গত ২ অক্টোবর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে বোমা বিস্ফোরণের পর তাতে বাংলাদেশি জঙ্গিদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে তার তদন্তে সোমবার ঢাকায় আসে এনআইয়ের একটি প্রতিনিধি দল।

মঙ্গলবার পুলিশ সদর দপ্তরে প্রায় আড়াই ঘণ্টা বৈঠকের পর বিকালে উত্তরায় র‌্যাবের সদর দপ্তরে যান ভারতের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা, যার নেতৃত্বে রয়েছেন বাহিনীর মহাপরিচালক শারদ কুমার।

বৈঠকের পর র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এনআইএর প্রতিনিধি দল ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ ১১ জন ভারতীয় নাগরিকের নামের তালিকা দিয়েছে, যারা বাংলাদেশে আত্মগোপনে রয়েছে বলে তাদের ধারণা।

এরা হলেন- কাউসার, ইউসুফ শেখ, বোরহান শেখ, রেজাউল করিম, তালহা শেখ, আমজাদ আলী শেখ, আবুল কালাম, শাহনুর আলম, হাবিবুর রহমান শেখ, জহিরুল শেখ ও নাসিরুল্লাহ।

মুফতি মাহমুদ বলেন, “র‌্যাবের পক্ষ থেকে ১০ জঙ্গিসহ ৫১ জনের একটি তালিকা এনআইএর প্রতিনিধি দলের হাতে দেওয়া হয়েছে।”

এনআইএকে দেওয়া র‌্যাবের তালিকায় থাকা জঙ্গিদের মধ্যে রয়েছেন জেএমবির বর্তমান আমির সোহেল মাহফুজ, ত্রিশালে পুলিশ হত্যা করে জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় পলাতক জেএমবি সদস্য সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি ও জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজান, আনোয়ারুল ইসলাম, সাখাওয়াত ও আবু সাঈদ শেখ হোসাইন।

তালিকায় ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার পলাতক আসামি মাওলানা তাজউদ্দিনসহ হুজির (হরকাত-উল জিহাদ আল ইসলামী) চার সদস্যের নাম রয়েছে। বাকিরা হলেন- শফিকুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মুফতি আব্দুল হাই।

তালিকার বাকি ৪১ জনের মধ্যে শীর্ষ শাহাদাত, মুকুল, শাহীন, রবিন, জিশান, জয়, মামুন, মোল্লা মাসুদ ও কালুর নাম রয়েছে।

এনআইয়ের চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমানসহ বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে পুলিশ সদর দপ্তরে এনআইএ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন ভারথীয় গোয়েন্দাদের সঙ্গে তদন্ত সমন্বয় করতে বাংলাদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত ছয় সদস্যের প্রতিনিধি দল। 

পর ঢাকা মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় সন্দেহভাজনদের যে তালিকা এনআইএ কর্মকর্তারা দিয়েছে, তাতে সানি, মিজান ও ফারুকের কথা রয়েছে।

জেএমবির এই তিন নেতাকে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও খুঁজছে।  

গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে পুলিশ সদস্যকে মেরে জেএমবির শুরা সদস্য রাকিবুল হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮) এবং বোমা বিশেষজ্ঞ মিজানকে (৩৫) ছিনিয়ে নেওয়া হয়।

পালানোর পথে ওই দিনই টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গ্রেপ্তার হন রাকিবুল হাসান। পরে পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন তিনি।

বাকি দুজনের কোনো খোঁজ না পেয়ে বাংলাদেশের পুলিশ তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, “এনআইএ মনে করছে, বর্ধমানের ঘটনায় তাদের সম্পৃক্ততা আছে। এ কারণেই তাদের খুঁজছেন ভারতের গোয়েন্দারা। এনআইএ বিভিন্ন পাওয়া তথ্য থেকে জানতে পেরেছে তারা বর্ধমানের ঘটনায় কোনো না কোনোভাবে যোগসূত্র থাকতে পারে।”

বোমা বিশেষজ্ঞ মিজান পশ্চিমবঙ্গে জেএমবির তরুণ জঙ্গিদের বোমা বানানোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বলেও এনআইএ কর্মকর্তাদের সন্দেহ।

মনিরুল বলেন, “এই তিনজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে তারা সহযোগিতা চেয়েছে। আমরাও তাদের কাছে ওই তিনজনকে গ্রেপ্তারের সহযোগিতা চেয়েছি। আমরাও তাদেরকে ওই তিনজনের ছবি দিয়েছি। আমরা বলেছি, তার সেখানে নাম পরিবর্তন করে থাকতে পারে।”

বর্ধমানের ঘটনায় এনআইএর হেফাজতে থাকা শেখ রহমতুল্লাহ সাজিদ যে বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের মাসুম সে বিষয়েও পুলিশ ‘অনেকটা নিশ্চিত’ হতে পেরেছে বলে তিনি জানান।

“সাজিদের আত্মীয়-স্বজন ও কাছের লোকদের মাধ্যমে গোয়েন্দারা অনেকটা নিশ্চিত হতে পেরেছে সাজিদই মাসুম। সে ২০০৫ সালে কোটালীপাড়ায় ব্র্যাক ব্যাংকে ডাকাতির মামলায় এবং ২০১২ ঢাকায় গ্রেপ্তার হয়েছিল।”

তবে বাংলাদেশের দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে হত্যার জঙ্গি ষড়যন্ত্রের বিষয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে আসা প্রতিবেদনের বিষয়ে মনিরুল বলেন, ‘ওপেন সোর্স’ থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে এনআইয়ের তথ্যের অনেক ‘গরমিল’ রয়েছে।

“বর্ধমানে বোমা তৈরি করা হচ্ছিল। তবে কী কাজে কোথায় বোমাগুলো ব্যবহার করা হত, সে বিষয়ে এনআইএ এখনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি।”

বর্ধমান বিস্ফোরণের ঘটনায় এনআইএ তাদের কাছে থাকা তথ্য বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের দিয়েছে, অন্যদিকে র‌্যাব-পুলিশও তাদের পাওয়া বিভিন্ন তথ্য দিয়েছে।

“দুই দেশের এই সব তথ্য মেলানোর পরই মূলত একটা পূর্ণাঙ্গ রূপ দাঁড় করানো সম্ভব হবে,” বলেন গোয়েন্দা কর্মকর্তা মনিরুল।

বর্ধমানের ঘটনায় ভারতের হায়দ্রাবাদের একজন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তারের খবর এনআইএ ইতোমধ্যে জানিয়েছে।

সেক্ষেত্রে অন্য দেশের কেউ বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করছে কি না- জানতে চাইলে মনিরুল বলেন, “আমাদের আলোচনা যে পর্যন্ত হয়েছে। তাতে দুই দেশের নাগরিকরা জড়িত বলে মনে হয়েছে। একটা ভারতীয়, আরেকটি বাংলাদেশি।

“এর বাহিরে অন্য নতুন তথ্য, তারাও বলেছে তদন্তে তারাও প্রাথমিকে পর্যায়ে রয়েছে। ফলে তদন্তে আরো নতুন কোনো তথ্য বের হয়ে আসতে পারে।”

এনআইএ সন্দেহভাজনদের তালিকা দিয়ে কী যুক্তিতে দিয়েছে- জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “এ ঘটনায় তারা যাদের গ্রেপ্তার করেছে, তাদের চেহারার বর্ণনা দিয়েছে এবং সম্ভাব্য ঠিকানা ও সম্ভাব্য ন্যাশনালিটি দিযেছে।

“তবে সেটি আমরা যাচাই করব। তারা তাদের স্টেট (রাষ্ট্র) এর নাগরিকদের বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু আমাদের নাগরিকদের বিষয়ে সম্ভাব্য ধারণার ওপর বলছে।”

এনআইএ কর্মকর্তারা বুধবার ফিরে যাবেন। তারা বাংলাদেশের কর্মকর্তাদেরও ভারতে যাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বলে পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল জানান।