অধ্যাপক শফিউলের বাড়ি থেকে ছাত্রী আটক

নিহত অধ্যাপক এ কে এম শফিউল ইসলামের বাড়ি থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে আটক করেছে পুলিশ, যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

শহীদুল ইসলাম, রাজশাহী থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Nov 2014, 03:19 PM
Updated : 19 Nov 2014, 09:18 AM

গত শনিবার শফিউল খুন হওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন চৌদ্দপাই এলাকায় তার তালাবদ্ধ বাড়ি থেকে ওই ছাত্রীকে আটক করা হয় বলে রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার মাহাবুবুর রহমান জানিয়েছেন।

এক ছাত্রীকে আটকের খবরটি বিভিন্ন গণমাধ্যমে এর আগে এলেও পুলিশের কোনো কর্মকর্তা মুখ খুলছিলেন না। যে ১১ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তাদের মধ্যেও এই ছাত্রী ছিলেন না।

মঙ্গলবার রাতে মাহাবুবুর রহমান ওই ছাত্রীকে আটকের খবরটি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে স্বীকার করেন, যিনি বদলি হওয়ায় একদিন পরই রাজশাহী ছাড়তে যাচ্ছেন।

মাহাবুবুর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “নিহত শিক্ষকের বাড়ি থেকে তালাবদ্ধ অবস্থায় ওই ছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে তাকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে তার মায়ের সঙ্গে রাখা হয়েছে।”

শফিউল যে বিভাগে অধ্যাপনা করতেন, ওই ছাত্রী ওই বিভাগেরই শিক্ষার্থী বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা মাহাবুব।

ওই তরুণীর নাম জানানো হলে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ওয়ারদাতুল আকমাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই ছাত্রী এবার মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে ফলের অপেক্ষায় রয়েছেন।

এক স্ত্রীর আত্মহত্যার পর পরবর্তী দুই স্ত্রীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর চৌদ্দপাই এলাকায় বাড়ি ভাড়া করে একাই থাকতেন অধ্যাপক শফিউল। তার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একমাত্র ছেলে ঢাকায় থাকেন।

ওই ছাত্রীর অধ্যাপকের বাসায় তালাবদ্ধ অবস্থায় থাকার কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ওই ছাত্রীর কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

ওই ছাত্রী পুলিশকে জানিয়েছেন, কিছু সময়ের জন্য তাকে বাড়িতে রেখে যাওয়ার কথা বলে বাড়ির ফটকে তালা লাগিয়ে বাইরে যান অধ্যাপক শফিউল। শফিউলের ফিরতে দেরি হওয়ায় তিনি ফোন করেন। প্রথমবার ফোন না ধরার পরে দ্বিতীয়বার ফোন করে মোবাইল বন্ধ পান তিনি।

পুলিশ কর্মকর্তা মাহাবুব বলেন, “এরপর সে (ছাত্রী) তার বন্ধুদের ফোন করে শিক্ষকের বাড়িতে আটক হয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানালে কেউ কেউ তাকে বাসার পেছনের দেয়াল টপকে বের হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। আবার কেউ পুলিশ দেখে ফেলতে পারে এটা জানিয়ে তাকে চুপচাপ বাসায় বসে থাকার কথা বলেন।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নিহত অধ্যাপক শফিউল ইসলামের বাড়িতে যাওয়ার পথ। মহাসড়ক থেকে এই কাঁচা পথ ধরে ২০০ গজ এগোলেই তার বাড়ি।

শিক্ষকের বাড়িতে আটকে পরার পর ওই ছাত্রী তার মাকেও ফোন করেন। তখন তিনি জানতে পারেন, যে বাড়িতে তিনি আটকে আছেন, তার কাছেই খুন হয়েছেন তার শিক্ষক।

“তার কথা ভেরিফাই করে এখন পর্যন্ত কথাগুলোর সত্যতা পেয়েছি,” বলেন পুলিশ কমিশনার মাহাবুব।

এই ছাত্রীর সঙ্গে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের সাবেক এক ছাত্রের সম্পর্ক রয়েছে বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। ওই ব্যক্তির কোনো সংশ্লিষ্টতা রয়েছে কি না- তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

মাহাবুব বলেন, “ঘটনার সঙ্গে তার (ছাত্রী) সংশ্লিষ্টতা আর শিক্ষকের ব্যক্তিগত বিষয়াদি- এই দুটি বিষয় থাকতে পারে। তবে শিক্ষক তো মারা গেছেন...তাই খুনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার বিষয়টিই আমরা ভেরিফাই করছি।

“তার সঙ্গে অধ্যাপক শফিউলের ব্যক্তিগত সম্পর্ক যদি থেকে থাকে, তা এই খুনের ঘটনায় কোনো প্রভাব রেখেছে কি না, আমরা তা খতিয়ে দেখছি।”

ওই ছাত্রীর অধ্যাপক শফিউলের বাড়িতে আটকে পড়ার বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ওয়ারদাতুল আকমাম জানিয়েছেন।

“আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। পুরো বিষয়টি পুলিশ দেখছে, আমি কিছুই জানি না।”

তবে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের একজন শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, মাস্টার্সের রেজাল্টের পর অধ্যাপক শফিউলের অধীনেই থিসিস করার কথা ছিল ওই ছাত্রীর।

ওই ছাত্রীর পরিবারের সদস্যরাও অধ্যাপক শফিউলের সঙ্গে পারিবারিকভাবে ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করেন এই শিক্ষক।

তিনি বলেন, “তার (ওই ছাত্রী) মা-বাবারও শফিউলের বাসায় যাতায়াত ছিল।”

লালনভক্ত শফিউলের বাড়িতে প্রতি সোমবার বাউল গানের আসর বসত। ওই ছাত্রী তাতেও অংশ নিতেন বলে ওই শিক্ষক জানান।