বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আটটি সংগঠন দেশের পাঁচটি এলাকার ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে।
মানবাধিকার, সুশাসন ও উন্নয়ন নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ী স্থাপনা, কারখানা প্রতিষ্ঠা, নগরায়ন, আবাসন প্রকল্প ও সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার নামে একের পর এক বসত ভিটা, কৃষিজমি, বনভূমি, জলাধার বেআইনিভাবে বেহাত হচ্ছে।
কৃষিজমি ও বনভূমিতে সেনানিবাস ও অন্য কোনো স্থাপনা না করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে সংগঠনগুলো।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত থেকে সুলতানা কামালও সেনা স্থাপনার জন্য জমি অধিগ্রহণ না করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
শুক্রবার এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশে জমির দাম সাংঘাতিক। জমি তো সোনার চেয়েও দামি বাংলাদেশে।”
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সেনাবাহিনীর সঙ্গে বাসিন্দাদের সংঘর্ষের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “মানুষকে মেরে ধরে, রূপগঞ্জে তো হত্যাকাণ্ডই ঘটাল। এগুলো এখন পর্যন্ত সুরাহা হয়নি, জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা চালিয়েই যাচ্ছে। জায়গায় জায়গায় তারা এটা করছে।
“যেখানে বসতি আছে সে জায়গাগুলো যেন না নেয়, এতো বিশাল জমি তাদের আবাসনের জন্য কেন দরকার? হাজার হাজার একর জমি তারা নিয়ে নিয়েছে তাদের বাসস্থানের জন্য-কেন?”
অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), আইন ও সালিশ কেন্দ্র, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট), আদিবাসী ফোরাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), নিজেরা করি, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) যৌথভাবে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
এ সংবাদ সম্মেলনে জমি বেহাত হওয়ার বিষয়ে সংস্থাগুলোর পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। বেদখল ও অধিগ্রহণ বন্ধে সাত দফা সুপারিশও তুলে ধরা হয়।
এসব সুপারিশের অন্যতম হচ্ছে- মানুষের জীবন জীবিকা, পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তা পদদলিত করে, এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে বলপূর্বক প্রতিরক্ষা ও আবাসন অবকাঠামো বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার শৈলাট গ্রাম, কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়ন, বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলা, পাবনার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা, নিমাইচড়া ও হান্ডিয়াল ইউনিয়ন ও নোয়াখালী জেলার সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলায় যৌথভাবে সম্পাদিত সরেজমিন তথ্য অনুসন্ধানের প্রাপ্ত তথ্য তুলে ধরা হয়।
সেখানে বলা হয়, গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার শৈলাট এলাকার নিরীহ গ্রামবাসীদের প্রায় ৮শ বিঘা জমি ভরাট করে নিচ্ছে চারটি বেসরকারি কোম্পানি।
কক্সবাজারের রামুতে নতুন সেনানিবাস নির্মাণের জন্য বনবিভাগের প্রায় ১৮০০ একর জমি সেনাবাহিনীকে বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এছাড়া পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের মতামত না নিয়ে বান্দরবানের রুমায় নতুন একটি সেনানিবাসের জন্য ৯৯৭ একর জমি সেনাবাহিনীকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এতে ৩৬টি আদিবাসী পরিবার প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, যার মধ্যে ১০টি পরিবারকে বাস্তুচ্যুত হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়েছে।
সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, চলনবিলের পাবনা চাটমোহর অংশের কৃষিজমিতে নতুন সেনা স্থাপনা নির্মাণের জন্য ১৪০৮ দশমিক শূন্য ৫ একর জমি বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান।
এছাড়া নোয়াখালী জেলার হাতিয়া ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার চরাঞ্চলে প্রায় ৪৫ হাজার একর কৃষিজমি সেনাবাহিনীকে বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিসভার দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা কৃষিজমি সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলছেন। কিন্তু ভূমিগ্রাসীদের অপতৎপরতা রোধে সরকারের সদিচ্ছার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি না, যা আমাদের বিশেষভাবে ভাবিয়ে তুলছে।”