'ঘুষ অবৈধ নয়' বলিনি: অর্থমন্ত্রী

‘ঘুষ অবৈধ নয়’ কখনোই এই মন্তব্য করেননি বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

আবদুর রহিম হারমাছি প্রধান অর্থনৈতিক প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2014, 04:06 PM
Updated : 13 Nov 2014, 08:33 PM

দুটি বাংলা দৈনিক এবং একটি অনলাইন পত্রিকায় অর্থমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে এই শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর সারা দেশে  আলোচনার পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মন্ত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এই প্রতিবেদনগুলোতে আমার মূল বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে মনগড়া, অবান্তর কথা-বার্তা অত্যন্ত অশালীন-নোংরাভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।”

“আমি এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।”

মুহিত বলেন, “সুশাসন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি সব সময়ই সোচ্চার ছিলাম, আজীবন থাকব। আমার মুখ দিয়ে এ ধরনের কথা বের হওয়ার প্রশ্নই আসে না।”

কথিত বক্তব্যের অনুষ্ঠান সম্পর্কে বর্ণনা দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, “পোশাক শিল্প শ্রমিকদের ডরমিটরি নির্মাণে ঋণ প্রদানের নিমিত্তে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিজিএমইএর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ঋণ খেলাপের সংস্কৃতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমি বলেছিলাম যে,  ‘আমাদের দেশে ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করার একটা সংস্কৃতি ছিল এবং সেখান থেকে আমরা অধুনা বেরিয়ে আসতে পেরেছি।’

“ওই অনুষ্ঠানে আমি বলেছিলাম, ‘স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে খেলাপিঋণ অনুপাত যেখানে ছিল ৪০ শতাংশ; বর্তমানে তা ১০-১১ শতাংশ। তবে এটা সন্তোষজনক হবে যদি আরো নিচে নামানো যায়।’

“মাত্র ২ শতাংশ সুদে শ্রমিকদের ডরমিটরি নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক যে ব্যবস্থা নিয়েছে তার প্রশংসা করে আমি বলেছিলাম, ‘এতে আবাসন খাতে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হবে। আমাদের দেশে যেখানে আবাসনের ব্যবস্থা তেমন ভালো নয় সেখানে এই ক্ষেত্রে গার্মেন্টস শিল্প সহজ শর্তে সুদ নিয়ে একটি বড় সমস্যা সমাধানে মূল্যবান ভূমিকা রাখবে।’

“বাংলাদেশ ব্যাংক গরিব জনগণকে সেবা দানের জন্য অত্যন্ত সহজ শর্তে ঋণ দেবার ব্যবস্থা করেছে এবং সেজন্য আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রশংসা করেছিলাম।”

“ওই অনুষ্ঠানে আমি আরও বলেছিলাম, ‘একসময় আমাদের ঋণগ্রহীতারা মনে করতেন যে, তারা কষ্ট করে ঋণ নেন এবং ঋণ নিতে গিয়ে অনেক টাকা ব্যয় করেন। তাই তারা ঋণ পরিশোধে ততটা আগ্রহী হতেন না।’

“সেই কালচারের পরিবর্তন হয়েছে। ঋণ অনেক সহজে পাওয়া যায় ও ঋণ পরিশোধিত হয়।”

“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গ টেনে আমি বলেছিলাম, ‘সেখানে অনেক কাজ করতে গেলে তা এজেন্টের মাধ্যমে করতে হয় এবং এজেন্টরা এ কাজ অর্থের বিনিময়ে করে থাকেন। যা সেখানে স্পিড মানি হিসেবে পরিচিত। এটা সেদেশে অবৈধ নয়। সেখানে সেবার পরিবর্তে দাম দেওয়ার রেওয়াজ আছে।’

ফাইল ছবি

“কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক এবং বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম যে, ওই প্রতিবেদনগুলোতে আমার মূল বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে তাদের মনোমত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি রেওয়াজ সম্বন্ধে বলতে গিয়ে আমি যা বলেছি তা অবান্তর, অত্যন্ত অশালীনভাবে আমার মন্তব্য বলে প্রকাশ করেছে।”

“যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”

ওই সংবাদ মাধ্যমগুলোতে প্রতিবাদ পাঠিয়েছেন বলেও জানান মন্ত্রী।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠানটি হয়েছিল।

ওই রাতে একটি অনলাইন পত্রিকায় অর্থমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়ে ‘ঘুষ অবৈধ নয়’ নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। রাতে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে আলোচনায় মন্ত্রী ওই মন্তব্য করেছেন বলে তার সমালোচনা করা হয়।

বুধবার দুটি জাতীয় দৈনিকে একই শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়।