কামারুজ্জামানকে ফের আপিলের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের জন্য আপিলের রায়েও মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর নেতা মো. কামারুজ্জামানকে আবার আপিলের সুযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে সে পর্যন্ত দণ্ড কার্যকর স্থগিত রাখতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Nov 2014, 05:26 PM
Updated : 9 Nov 2014, 05:31 PM

চূড়ান্ত রায় হয়ে যাওয়ার পর দণ্ড কার্যকরের প্রস্তুতি নিয়ে সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যের মধ্যে রোববার এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠনটি, যারা বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধের আগের রায়গুলোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আসছে।

কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকর স্থগিতের আহ্বান জানিয়ে এইচআরডব্লিও’র এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাড এডামস বলেন, “যেই বিচারিক প্রক্রিয়াটি ত্রুটিপূর্ণ এবং যেখানে এই মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ দেওয়া হয় না, সেখানে এই ধরনের রায় মোটেও মানা যায় না।”

একাত্তরে ময়মনসিংহ অঞ্চলের আল বদর প্রধান কামারুজ্জামানকে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে গত বছরের ৯ মে রায় দিয়েছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিলের সুযোগ পেয়েছিলেন এই জামায়াত নেতা।

তাতে শেরপুরের সোহাগপুরে ১২০ জন নিরীহ মানুষকে একসঙ্গে হত্যার অপরাধে জামায়াত নেতার মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। একাত্তরে একসঙ্গে এত পুরুষকে হত্যার পর বহু নারী অকালে বিধবা হওয়ায় গ্রামটি ‘বিধবা পল্লী’ হিসেবে পরিচিতি পায়, যাদের কয়েকজন ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্যও দিয়ে গেছেন।

ফাইল ছবি

আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ের পর এখন কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। তবে আপিলের রায়ের বিরুদ্ধে কামারুজ্জামান দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাইতে পারেন। সেই সুযোগ কামারারুজ্জামানকেও দেওয়া হচ্ছে বলে সরকার জানিয়েছে, যদিও এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির।    

কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা আপিল বিভাগের রায় পর্যালোচনার (রিভিউ) আবেদন করার কথা জানিয়েছেন। সেই সুযোগ নেই দাবি করলেও সব আইনি প্রক্রিয়া সারার পরই কামারুজ্জামানের দণ্ড কার্যকর হবে বলে আইনমন্ত্রী বলছেন। তবে এতে ‘তড়িঘড়ি’ করা হচ্ছে দাবি করে এইচআরডব্লিউ তা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে। 

বিবৃতিতে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষেত্রেও সেই দণ্ড না দেওয়ার পক্ষে মত জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠনটি।

মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করে এর আগেও ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রও একই আহ্বান জানালে তার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার নজির তুলে ধরে আসছেন। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচারের মধ্য দিয়ে মানবাধিকার সমুন্নত রাখার কথাও বলছেন তিনি।

এইচআরডব্লিও কামারুজ্জামানসহ ট্রাইব্যুনালের সবার বিচার প্রক্রিয়াই ‘ত্রুটিপূর্ণ’ বলে দাবি করেছে। এক্ষেত্রে অসঙ্গতি তুলে ধরায় ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও দাবি করেছে সংগঠনটি, যিনি যুদ্ধাপরাধের বিচারবিরোধী বলে বাংলাদেশে চিহ্নিত।