রোববার যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান জনাকীর্ণ আদালতে ১৪টি অভিযোগের মধ্যে দুটিতে ফাঁসির রায় দেন।
সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত বাকি আটটিতে মোট ৭২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে জামায়াতে ইসলামীর শুরা সদস্য মীর কাসেমকে।
রায়ের পর প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেন, “চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসীমসহ অন্যদের হত্যা করে কর্ণফুলী নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার অভিযোগে মীর কাসেমকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। এছাড়া অপহরণ, আটক, নির্যাতনের অভিযোগে ৭২ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত।”
এই রায়ের মধ্য দিয়ে শহীদ পরিবার, ভুক্তভোগী ও দেশবাসী প্রত্যাশিত বিচার পেয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
রায়ের বিষয়ে জেয়াদ আল মালুম বলেন, “আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছে তৎকালীন জামায়াতের আমীর গোলাম আযমের নির্দেশে ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা মীর কাসেম মুক্তিযোদ্ধা ও নিরস্ত্র সাধারণ মানুষকে হত্যা, নির্যাতন করেছে, যা মানবতা ও মানব ইতিহাসে অন্যতম অপরাধ। এই বিচারের মধ্য দিয়ে দায়মুক্তির আরেকটি ধাপ পেরোলো জাতি।”
প্রসিকিউশন দলের আরেক সদস্য তুরীন আফরোজ বলেন, মীর কাসেমের মামলাটি ‘চ্যালেঞ্জিং’ ছিল।
“চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে যে কনসেনট্রেশন ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল, সেটি যে বিশ্বের অন্যান্য কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মতোই ভংঙ্কর ছিল, তা আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি।”
মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লায় ডালিম হোটেলে মীর কাসেমের নেতৃত্বে গড়ে তোলা হয় নির্যাতন কেন্দ্র। স্বাধীনতার পক্ষের লোকজনকে ধরে কুখ্যাত ওই টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাযতনের পর হত্যা করা হতো।
তুরীন আফরোজ বলেন, “আদালত তার অবজারভেশনে বলেছেন, ডালিম হোটেল ছিল একটি মার্ডারিং মেশিন, আর মীর কাসেম আলী ছিলেন এর অপরিহার্য অংশ।
“এই মামলাটির কিন্তু সবগুলো চার্জ ডালিম হোটেলকে কেন্দ্র করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের যে মামলাগুলো রয়েছে, যেমন ডাকাও কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের যে মামলা অথবা ম্যাথুসের বা বেলসের ক্যাম্পের যে মামলাগুলো হয়েছে, সেগুলোর আদলে এই মামলাটির চার্জ আনা হয়েছে।”
রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কিনা জানতে চাইলে প্রসিকিউটর তুরীন আফরোজ বলেন, “এ বিষয়ে আলোচনা করে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার প্রক্রিয়া শুরুর পর এটি ছিল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাদশ রায়।