বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ কী?

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিদ্যুৎ বিপর্যয়কে ‘কারিগরি ত্রুটি’ বললেও এর কারণ নিয়ে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি বিদ্যুতের শীর্ষ কর্তাদের কাছ থেকে।

রিয়াজুল বাশারবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2014, 03:45 PM
Updated : 1 Nov 2014, 05:37 PM

বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ মনে করছেন, কারিগরি ত্রুটির পাশাপাশি কর্মকর্তাদের ‘ভুলও’ থাকতে পারে।

শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় গ্রিডে বিপর্যয়ের পর সারাদেশ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে। এরপর মেরামত কাজ চলার মধ্যেই বিকালে আবার গ্রিডে বিপর্যয় দেখা দেয়।

এর ফলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর্যন্ত প্রায় পুরো বাংলাদেশই বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন ছিল। এতে সারাদেশে ভোগান্তির পাশাপাশি দুর্ভোগ চরমে ওঠে হাসপাতালে থাকা রোগীদের।

কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বাংলাদেশ ও ভারতের সরবরাহ লাইনে ত্রুটি থেকে সারাদেশে এই বিদ্যুৎ বিপর্যয় নেমে আসে বলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়। ওই লাইন দিয়ে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে বাংলাদেশ।

কুষ্টিয়ার কর্মকর্তারা বলেন, ভেড়ামারার রামকৃষ্ণপুরে অবস্থিত ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি ভারত-বাংলাদেশ ব্যাক টু ব্যাক বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্রে আকস্মিক বিপর্যয় ঘটে।

ব্যাক টু ব্যাক বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আলমগীর হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেলা ১১টা ২৭ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের সময় হঠাৎ করে এ কেন্দ্রে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ব্ল্যাক আউট হয়।”

কিন্তু ভেড়ামারায় আন্তঃদেশীয় গ্রিডের ওখান থেকেই সমস্যা হয়েছে কি- জানতে চাওয়া হলে বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার হোসেন অস্বীকার করেন।

তিনি সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “না না না। না না না। টেকনিক্যাল ফল্টটা খতিয়ে দেখতে আমরা একটা কমিটি করেছি। কমিটি খতিয়ে দেখার আগে কথা বলা ঠিক না।”

বিকালে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির (পিজিসিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম-আল-বেরুনির কাছে কারণ জানতে চাওয়া হলে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানিয়ে তিনিও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বিপর্যয়ের কারণ জানতে চাওয়া হলে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, “দুটো জিনিস। টেকনিক্যাল ফল্ট তো আছেই। এই টেকনিক্যাল ফল্টটাকে রিকভারি করতে হবে আমাদের। আমাদের সাথে সিস্টেম কাজ করত পারে নাই।

“আরেকটা বিষয় হিউম্যান এরর (মানবসৃষ্ট ভুল) থাকতে পারে হয়ত। প্রপার টাইমে প্রপার হিট করা, সেটায় গাফিলতি হতে পারে।”

দেশের ইতিহাসে বড় বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের পর মানুষের মধ্যে উদ্বেগের পাশাপাশি নানা ধরনের গুজবও ছড়িয়ে পড়ে।

নাশকতার কোনও বিষয় ছিল কি না, এ বিষয়ে আপনি কী মনে করেন- জানতে চাওয়া হলে নসরুল হামিদ বলেন, “না এখনও এ পর্যন্ত আসি নাই। দেখা যাক। কোনও কিছুই উড়িয়ে দেওয়া যায় না।”

এই বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ বিভ্রাট এর কারণ নিরূপণ, দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) এর নেতৃত্বে ৭ (সাত) সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই কমিটিকে তাদের প্রতিবেদন বিদ্যুৎ সচিব, বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।